আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:–
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এলাকাবাসী। স্থাপনের পর থেকেই সোলার প্যানেলগুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এসব প্যানেল এখন উল্টো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। বরং তাদের হাতে পল্লী বিদ্যুতের অযৌক্তিক বিলের কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা নিয়ে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, ২০২১ সালে সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঘুঘুমারি ও সুখেরবাতির চরে মোট ৩৭৫টি পরিবারকে সৌর প্যানেল দেওয়া হয়। কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করার কথা বলে জনপ্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এই টাকা স্থানীয় তৎকালীন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু সোলার প্যানেলগুলো স্থাপনের পর থেকেই অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যা কোনো কাজে আসছে না।
চর ঘুঘুমারীর রুহুল আমীন, আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক, আব্দুস সবুর প্রামাণিক, কাশেম আলীসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, “আমাদের এলাকায় বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। ২০২১ সালে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সহযোগিতায় চর ঘুঘুমারি ও সুখেরবাতির দুই চরে ৩৭৫টি পরিবারে বিভিন্ন পাওয়ারের সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়, যার মূল্য কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা বলা হয়।”
কিন্তু সোলার স্থাপনের আট-নয় মাস পর কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর অফিস থেকে বিলের কাগজ আসে গ্রামবাসীর হাতে।
স্থানীয়রা জানান, এসব সোলার দিয়ে কোনো বাতিও জ্বলে না। কারো ব্যাটারি নষ্ট, কারো লাইন নষ্ট হয়ে প্যানেলগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। তারা বলেন, “আমরা সোলার চাই না। এগুলো ফেরত নিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হোক। আমরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করবো।”
৬৭ বছর বয়সী জহুর উদ্দিন বলেন, “চেয়ারম্যান, মেম্বারের কথায় ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে ৫০ ওয়াটের সোলার নিয়েছিলাম। কিন্তু এক দিনের বেশি বাতি জ্বালাতে পারিনি। এখন সেগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তারপরও প্রতি মাসে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে বিলের কাগজ দিয়ে যায়।”
৪৬ বছর বয়সী লুৎফর প্রামাণিক বলেন, “আমাকে একটি ৩০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দেওয়া হয়েছে। যার গড় মাসিক বিল ৪৮ টাকা। ২০২১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বকেয়া ধরা হয়েছে ২৩০০ টাকা। অথচ একদিনও আলো জ্বলেনি ঠিকমতো।”
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উলিপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, “যারা সোলার রাখতে চাইছেন না, তাদের আবেদনের ভিত্তিতে সেগুলো খুলে নেওয়া হচ্ছে। যারা রাখতে চান, তারা রাখতে পারবেন। প্রতি মাসে নিয়মিত বিল দিলে এত টাকা হতো না। নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে বিল পরিশোধ করতে হবে।”
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু আপনি জানিয়েছেন, সেহেতু উলিপুর উপজেলার অফিস বিষয়টি দেখবে।”