আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শীতের শুরুতেই কুড়িগ্রামে রাত্রিকালীন পিকনিক পার্টি, পারিবারিক অনুষ্ঠানে শব্দযন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরের ভেতরেও চলছে উচ্চশব্দে গানবাজনা। যেন ‘শব্দবোমা’ চলছে। রাতভর অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে উচ্চ মাত্রায় মাইক ও সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ফলে চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটছে। নাগরিকদের ঘুমের ব্যাঘাতসহ স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের পরিত্রাণ দিতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
জনউপদ্রব বন্ধ করতে আইনি সতর্কতা জারি করেছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। রোববার (০৭ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজ ‘ডিসি কুড়িগ্রাম’-এ এক পোস্টের মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রার শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে শব্দ দূষণ ও গণউপদ্রব সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড এবং উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পোস্টে জেলার নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘সম্মানিত কুড়িগ্রামবাসী, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন অনুষ্ঠান, বনভোজন এবং যানবাহনে মাত্রাতিরিক্ত উচ্চশব্দে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজানো হচ্ছে। এই অনিয়ন্ত্রিত শব্দদূষণ শিক্ষার্থীদের চলমান বার্ষিক ও সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া, বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিবর্গ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটছে।’
এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সতর্কতা জারি করে পোস্টে বলা হয়েছে, ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে শব্দ পরিমাপের সুনির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা আছে এবং এই সীমা লঙ্ঘন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জেলা প্রশাসন, কুড়িগ্রাম শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আইন অমান্য করে যারা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে উচ্চশব্দে মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করবেন, তাদের বিরুদ্ধে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করা হবে।’
শব্দদূষণ মুক্ত পরিবেশবান্ধব কুড়িগ্রাম গঠনে সবাই সহযোগিতা করবে বলে প্রত্যাশা করেছে জেলা প্রশাসন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নাগরিকরা। তারা অনতিবিলম্বে আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এই উপদ্রব থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন দাবি করে শাহিন শেখ নামে এক নাগরিক বলেছেন, ‘চড়ুইভাতির নামে রাতভর উচ্চমাত্রার শব্দ যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক একমাত্র ভুক্তভোগীরা জানে! কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার ভয়ে অনেকে কিছুই বলে না। খুব দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।’
মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামে আরেক নাগরিক বলেন, ‘ওয়াজ মাহফিলের বিপক্ষে নই আমি। তবে যারা মাহফিলে যাবেন শব্দযন্ত্রের সাউন্ড শুধু তাদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখলে ভালো হয়। উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাইক ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মোঃ রাশিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘শুধু ফেসবুকে পোস্ট করলে হবে না। বাস্তবে কাজ করে দেখানো প্রয়োজন।’
তিন ঘণ্টায় সাড়ে তিন শতাধিক মন্তব্যকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই সময় পর্যন্ত পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ১৪৮ বার।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আমরা সবার সহযোগিতা চাই। সহযোগিতা পেলে শব্দদূষণমুক্ত কুড়িগ্রাম গড়া সহজ হবে।’


