মোঃ মাহাবুল ইসলাম মুন্না, রাজশাহী :
রাজশাহীর পর্যটন মোটেলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী জেলা নতুন কমিটির পরিচিতি সভা ও সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে তালাবদ্ধ করার হুমকি দেন সংগঠনের দুই নেতা। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে অনুষ্ঠানটি বাতিল হয়ে যায়।
হুমকিদাতা নেতাদের একজন সোয়েব আহমেদ হুমকিদাতা দুইজনের একজন সোয়েব আহমেদ—যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিলেন। বর্তমানে এনসিপি রাজশাহী মহানগরের কয়েকজন নেতার সঙ্গে চলাফেরা করলেও দলের কোনো পদে নেই তিনি।
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তিনি পাথর ছুড়ে ট্রেন থামানোসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ঘটনায় সমালোচিত হন। রাজশাহীর আসাম কলোনিতে দুই নারীকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগেও তার নাম উঠে আসে। তবে সে ঘটনায় তিনি মামলার আসামি নন।
ঘটনার শুরু :
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চলমান সভায় হঠাৎ এনসিপির মহানগর কমিটির একাংশের ২৫-৩০ জন নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে নতুন কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলমকে আওয়ামী লীগপন্থী আখ্যা দিয়ে সভা ভণ্ডুলের চেষ্টা করে।
হঠাৎ সোয়েব আহমেদসহ দুই নেতা সভাকক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের বের হয়ে যেতে বলেন এবং না গেলে দরজায় তালা লাগিয়ে রাখার হুমকি দেন। এমনকি টয়লেট ব্যবহারের পথও বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন তারা।
এতে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা একজোট হয়ে দুইজনকে ধাওয়া দেন এবং মোটেলের বাইরে বের করে দেন। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে এনসিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের উত্তপ্ত বাকবিনিময় চলে।
পুলিশের হস্তক্ষেপ :
খবর পেয়ে রাজপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, “শোয়েব নামে একজন ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে সাংবাদিকরা চলে যান।”
সাংবাদিকরা জানান, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি করছি। সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এনসিপির কোনো কর্মকাণ্ড কভার করা হবে না।”
এনসিপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া :
এনসিপির মহানগর আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলী বলেন, “ছেলেটা আমাদের সঙ্গে চলে, কিন্তু কোনো পদে নেই। বয়স কম, উত্তেজনায় এমন কথা বলে ফেলেছে। মূলত সাইফুলকে নিয়েই তাদের ক্ষোভ।”
জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, “আমার আওয়ামী লীগপন্থী হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আগে জিয়া পরিষদ ও পরে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। এখন এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। আমাকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে।”
গত শনিবার ঘোষিত এনসিপির ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট রাজশাহী জেলা কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সাইফুল ইসলামকে। তালিকায় স্বাক্ষর করেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। কমিটির মেয়াদ ছয় মাস।
সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম মিজানুর রহমান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নয়জন। এছাড়া রনিউর রহমান সদস্যসচিব, মীর ফারুক সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব এবং ১৪ জনকে যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পাঁচজন।


