ইমন সরকার, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় হঠাৎ করে বিভিন্ন বিল ও ফিসারিতে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছে। তীব্র দাবদাহ, হঠাৎ বৃষ্টিপাত ও নিম্নচাপপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এমন দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও মৎস্যচাষিরা। এর ফলে একাধিক এলাকায় কোটি টাকার বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা।
আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বিপর্যয় :
সম্প্রতি ভালুকায় কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র দাবদাহের পর হঠাৎ মেঘলা ও নিম্নচাপপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। এর ফলে পানির তাপমাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন হয় এবং দ্রবীভূত অক্সিজেন (DO) এর মাত্রা তীব্রভাবে কমে যায়। এতে মাছ পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে পানির উপরের দিকে উঠে আসে এবং একের পর এক মারা যেতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যেসব পুকুরে পচনশীল জৈব পদার্থ বা ‘লিটার’ জমে ছিল এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়নি, সেখানে অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি হয়ে জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক পরিবেশ তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলার নির্বাহী অফিসার হাসান আব্দুল্ল্যাহ আল মাহমুদ বলেন— “অধিকাংশ ফিশারিতেই কম বেশি পোল্ট্রি লিটার ব্যবহার করার কারণে মড়ক অনেক বেশি হয়েছে! দায় শুধু প্রকৃতির নয়, আমাদেরও আছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায় কথা বলে জানা গেছে, এত প্রকটভাবে (ভালুকা, গফরগাঁও এবং ত্রিশালের কিছু অংশের মতো) অন্যান্য জায়গায় মাছ মারা যায়নি। আসুন, সকলে মিলে এখনই সতর্ক হই।”
একজন খামারি বলেন, “আমার পুকুরে লাখ লাখ টাকার পোনা ছিল। হঠাৎ দেখি পানিতে ফেনা আর মাছ উপরে উঠে হাঁসফাঁস করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সব মরে গেল।”
আরেকজন যুক্ত করেন, “আমাদের ৫টি পুকুরে কোনো পোল্ট্রি লিটার ব্যবহার করা হয়নি। একটি মাছও মারা যায়নি। এটা প্রমাণ করে, যত দোষ ওই লিটারেরই।” তবে মাছচাষিদের একটি অংশ পোল্ট্রি লিটারের দায় সম্পূর্ণভাবে মানতে নারাজ। একজন অভিজ্ঞ চাষি বলেন, “ভালুকায় বিল ছাড়া অধিকাংশ পুকুরে পোল্ট্রি লিটার খুব কমই ব্যবহার করা হয়। যেসব পুকুরে মাছ মারা গেছে, তার সিংহভাগেই পাংগাসের সাথে অতি ঘনত্বের মিশ্র চাষ করা হয়েছে। ফলে তাপমাত্রা বাড়লে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। জিওলাইট, চুন, পরিমিত খাবার ও পানির পরিবর্তন করতে পারলে দেশি মাছের মরণ রোধ সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “পাংগাস ধরার পর পুকুরে থাকা দেশি মাছ মারা যাওয়া একটি সাধারণ বিষয়। তাই পাংগাস ধরার সাথে সাথেই দেশি মাছ বাজারজাত করা উচিত।” এই অভিজ্ঞ চাষি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “আমি প্রায় ২০ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। এখনও কোনো মৎস্য কর্মকর্তাকে মাঠে ভিজিট করতে দেখি নাই। কৃষি বিভাগ যেভাবে মানুষের ধারে ধারে যায়, ফিসারিজ বিভাগ তেমনভাবে সক্রিয় হলে ভালুকার মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতো।”
এ বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও অধিকাংশ খামারিরা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও মাঠপর্যায়ে ফিসারিজ কর্মকর্তাদের সক্রিয় ভূমিকাই চান।