ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ভালুকা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। কলেজের ভেতর ভর্তি ফরমের লম্বা লাইন, ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। কিন্তু সবার চোখে এক রকমের উচ্ছ্বাস থাকলেও, কয়েকজন শিক্ষার্থীর চোখে ছিল অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা আর লজ্জার ছায়া। ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পারায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল।
সেই কঠিন মুহূর্তে এগিয়ে আসেন ভালুকা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি তানভীর হাসান শান্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের মোবাইল নম্বর প্রকাশ করে তিনি ঘোষণা দেন যে কোনো শিক্ষার্থী যদি অর্থাভাবে ভর্তি হতে না পারে, তারা যেন সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
অভাবের দেয়াল ভেঙে স্বপ্নের পথে : কলেজের এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানালেন, “আমি ভেবেছিলাম ভর্তি হতে পারব না। বাবা দিনমজুর, সংসারে টানাটানি। তখন এক বন্ধু শান্ত ভাইয়ের ফেসবুক পোস্টটা দেখায়। ফোন করার পর ভাই নিজেই এসে ভর্তি ফি দিয়ে দিলেন। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি।”
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরেক শিক্ষার্থীও। তাঁর ভাষায়, “ভর্তি না হলে হয়তো পড়াশোনা বাদ দিতে হতো। শান্ত ভাই শুধু টাকা দিলেন না, তিনি আমাদের সাহসও দিয়েছেন যে অভাবে পড়াশোনা থেমে যায় না।”
মানবিকতার নতুন দৃষ্টান্ত : ভালুকা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সিয়াম সাব্বির রিশাদ বলেন, “শান্ত ভাই সবসময়ই অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। এবারও প্রায় বিশজন শিক্ষার্থী তাঁর সহযোগিতায় ভর্তি হতে পেরেছে। অনেককে একেবারেই বিনামূল্যে ভর্তি করানো হয়েছে, আবার কয়েকজনকে আংশিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।”
তানভীর হাসান শান্ত জানান, “আমি বিশ্বাস করি, অর্থের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থেমে যাওয়া উচিত নয়। ছাত্রদল শুধু রাজনীতি করে না, আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্বও নিতে চাই। সাম্য, মানবিকতা ও ভয়মুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়াই আমাদের লক্ষ্য।”
অভিভাবকদের কণ্ঠে স্বস্তি : ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। তাঁদের একজন বলেন, “আমার ছেলে ভর্তি হতে পারবে কিনা চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি। শান্তর কারণে সেই চিন্তা দূর হলো। আল্লাহ তাঁকে আরও ভালো করুক।”
এক নতুন বার্তা : ভালুকায় ছাত্রদলের এই উদ্যোগ আলোচনার ঝড় তুলেছে। শিক্ষার্থীরা বলছে এটাই রাজনীতির প্রকৃত রূপ, যেখানে নেতারা কেবল কথা নয়, বাস্তবে কাজের মাধ্যমে মানবিকতা ছড়িয়ে দেন।