মোঃ মাহাবুল ইসলাম মুন্না :
১ আগস্ট ২০২৫—রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা-তীরবর্তী নবঘোষিত সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর ও ‘পোর্ট অব কল’ সরেজমিন পরিদর্শন করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন ও শ্রম-কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বন্দরের অবকাঠামো, ড্রেজিং অগ্রগতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা বলেন, “এই বন্দর কেবল রাজশাহী নয়, সমগ্র উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”
সুলতানগঞ্জ নদীবন্দরটি ৫৯ বছর পর ২০২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমে ফিরে আসে, যখন বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় পোর্ট-অফ-কল হিসেবে পুনরায় চালু হয়। উদ্বোধনী দিনে এখান থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ যাত্রা করে, যা দুই দেশের নদীপথ ব্যবসাকে পুনরুজ্জীবিত করে।
বন্দরটি চালুর মাধ্যমে পাথর, সিমেন্ট-কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্য আমদানির খরচ ও সময় দুই-ই উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে; একই সঙ্গে তৈরি পোশাক, পাট ও কৃষিপণ্য রপ্তানির নব সুযোগ তৈরি হয়েছে। বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর কর্মকর্তারা।
আজকের পরিদর্শনে উপদেষ্টার সঙ্গে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান, রাজশাহী চেম্বার ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ড. হোসেন নাব্যতা রক্ষায় স্থায়ী ড্রেজিং ও আধুনিক নৌ টার্মিনাল স্থাপনের কথা বলেন। পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দক্ষতা বিকাশে স্থানীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিশেষ কোর্স চালুর ঘোষণা দেন।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরেই বন্দরে পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ভবন, ই-গেট, সিসিটিভি ও নদী-নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হবে। “বন্দরকে ঘিরে ৫ হাজারেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে,”—জানান উপদেষ্টা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বর্তমান প্রত্যাশিত কার্গো প্রবাহ ২৬ লাখ টন; নাব্যতা নিশ্চিত করলে তা দ্রুত দ্বিগুণ করা সম্ভব। উপদেষ্টা এ লক্ষ্যে নদী ইকো-ড্রেজিং প্রযুক্তি প্রয়োগের কথ বলেন।
পরিদর্শন শেষে ড. সাখাওয়াত হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত নদীপথ বাণিজ্যকে টেকসই করতে পরিবেশ-সম্মত অবকাঠামো গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
পরিদর্শন উপলক্ষে সুলতানগঞ্জ ঘাট এলাকায় উৎসব-মুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। ব্যবসায়ী-স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেন, আজকের এই উচ্চ-পর্যায়ের সফর বন্দরের সম্ভাবনাকে আরও বেগবান করবে এবং পদ্মা-পাড়ের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।