আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
তথ্য গোপন করে হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেওয়ায় বাংলা ট্রিবিউন ও দৈনিক আজকের পত্রিকার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতনের মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাবেক আরডিসি নাজিম উদ্দীন এবং সাবেক এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছেন আদালত। নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে তাদেরকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রবিবার (০৫ অক্টোবর) বিকালে কুড়িগ্রাম জেলা জজ মোসাম্মৎ ইসমত আরা এই আদেশ দেন।
এদিকে, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আগাম জামিনের মেয়াদ শেষের দিন নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলেও আসামি সাবেক কুড়িগ্রাম জেলা আরডিসি নাজিম উদ্দিন ও কুড়িগ্রাম জেলা এনডিসি রাহাতুল ইসলাম আত্মসমর্পণ করেননি। রোববার তাদের আত্মসমর্পণের দিন ধার্য ছিল।
কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোঃ বজলুর রশিদ এবং বাদীপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর গত ৩০ জুলাই আদালত চার্জশিট নথিভুক্ত করেছেন। কিন্তু আসামি নাজিম উদ্দীন ও রাহাতুল ইসলাম চার্জশিট দাখিল হওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের (৪২ দিনের) আগাম জামিন নিয়েছেন। তারা জামিন আবেদনে হলফ করে উল্লেখ করেছেন যে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তখনও (২৪ আগস্ট) চার্জশিট দাখিল করেননি।
আসামিরা তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন। আবার হাইকোর্ট জামিনের মেয়াদ শেষের দিন (৪২ তম দিন) আসামিদেরকে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেও আসামিরা ৪৩ তম দিনেও আত্মসমর্পণ করেননি।
অর্থাৎ তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশও অমান্য করেছেন। তথ্য গোপন করে আসামিদের জামিন প্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ করে জামিন বাতিলের জন্য আমরা কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে পিটিশন দিয়েছি। আদালত আমাদের আবেদন আমলে নিয়ে আসামিদেরকে শোকজ করেছেন। তথ্য গোপনের কারণে কেন তাদের জামিন বাতিল করা হবে না, আগামী সাত দিনের মধ্যে তার জবাব দেওয়ার জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।’ আগামী ১৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ০২ সেপ্টেম্বর মামলার প্রধান আসামি ও কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। সেদিন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে ১০ দিন কারাভোগের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান। তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার বসতবাড়ি ও বসতঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
এ নিয়ে সারা দেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে জামিন দেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।
জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন কুড়িগ্রাম ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।