আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার দুধকুমার নদীতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অব্যাহত রয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দিনের আলোয় রাস্তাকাজ আর রাতের আঁধারে ড্রেজার বসিয়ে নদীর বুক চিরে বালু লুট এই দ্বৈত চিত্রে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।
দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা, সেগুলোই উল্টো নতুন করে নদীভাঙন ও বসতভিটা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়ন ও নুনখাওয়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) অনলাইনে “চরাঞ্চলকে ঝুঁকিতে ফেলে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ‘নদী ডাকাতি’ ” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিবেদনে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ বদরুজ্জামান রিশাদ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, নিউজ প্রকাশের ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভবান্দেরকুটি মনিরের মসজিদ থেকে শহিদুলের বাড়ি পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০ মিটার এএইচবিবি রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৮০ লাখ ২ হাজার ৮৫৮ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কালীগঞ্জ ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই কাজেও দুধকুমার নদী থেকে উত্তোলিত বালু ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
একইভাবে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বটতলা বাজার ওয়াপদা বাঁধ থেকে ভাটি দিকদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৯ লাখ ৪ হাজার ১৭১ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহায়তায় মাটি দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কথা থাকলেও বাস্তবে বালু ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আনা হচ্ছে নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ইউনিয়নের দুধকুমার নদী থেকে।
গত ২৬ নভেম্বর অত্র এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে (০২ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ বদরুজ্জামান রিশাদ অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করেন এবং সংশ্লিষ্ট এক ইউপি সদস্যের কাছ থেকে মুচলেকা নেন।
তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নদীর মাঝখানে বসানো ড্রেজারের পাইপলাইনের কিছুই অপসারণ করা হয়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিনে লোক দেখানোভাবে মেশিন বন্ধ রাখা হয়, আর রাত নামলেই পুরোদমে চলে। তিনি আরোও জানান, এই সিন্ডিকেটকে কেউ থামাতে পারে না।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রিয়াজুল হক প্রধানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান বালু উত্তোলনের বিষয়ে বলেন, এগুলো কাজ এভাবেই হয়। সদর ইউএনও সাহেব এসে মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন।
তবে এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি সম্পূর্ণ অবৈধ।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ বদরুজ্জামান রিশাদের সঙ্গে দুই দিন ধরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথকে গত (০৯ ডিসেম্বর) বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, কুড়িগ্রামে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলায় বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেই, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে এসিল্যান্ড দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যস্ততার কারণে হয়তো তিনি যেতে পারেননি। আপনি নিউজটি আমাকে পাঠান, আমি এসিল্যান্ডকে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।


