স্টাফ রিপোর্টার :
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। এবার ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারাদেশে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ জন ছাত্রী। সারাদেশের ২ হাজার ৭৯৭ কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সময়সূচি অনুযায়ী, প্রথম দিনে সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক হাজার ৬০৫ কেন্দ্রে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন ৪৫৯ কেন্দ্রে আলিমের কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন ৭৩৩ কেন্দ্রে এইচএসসি (বিএম বা বিএমটি) পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব বোর্ডের প্রথম দিনের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হবে দুপুর ১টায়।
ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪১, রাজশাহীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৪২, কুমিল্লায় ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০, যশোরে ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৭, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৩৫ জন। এ ছাড়া বরিশালে ৬১ হাজার ২৫, সিলেটে ৬৯ হাজার ৬৮৩, দিনাজপুরে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৩২ এবং ময়মনসিংহে ৭৮ হাজার ২৭৩ জন। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজার ১০২ জন। কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম বা বিএমটি) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজার ৬১১ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই এবার এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। পাশাপাশি প্রশ্নফাঁস ও নকল প্রতিরোধেও তৎপর আমরা। স্বাস্থ্যবিধিসহ সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেগুলো তদারকি করার জন্য বোর্ডের একাধিক টিম কাজ করবে।
স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কড়াকড়ি : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা আন্দোলনও করেছেন। তবে পরীক্ষা পেছানোর এ দাবি পাত্তা পায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কাছে। পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের উদ্বেগ আমলে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে মেডিক্যাল টিম সক্রিয় রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও কেন্দ্রের সামনে যেন জটলা না থাকে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেন্দ্রের অভ্যন্তর ও আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পরীক্ষা শুরুর আগে মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ : পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এ সময়ের পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পরে প্রবেশ করলে রেজিস্ট্রার খাতায় তাদের নাম, রোল, প্রবেশের সময় ও দেরির কারণ উল্লেখ করে পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করতে হবে।
এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোনো কক্ষে পরীক্ষা বিলম্বে শুরু হলে, যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের ততটুকু সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্রের সঠিক সেট ও সংখ্যা যাচাই করতে বলা হয়েছে। অব্যবহৃত প্রশ্নপত্রের সেট কোনো অবস্থাতেই খোলা যাবে না। অক্ষত অবস্থায় বোর্ডে ফেরত পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় জমা দিতে হবে।
২০২৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে : মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সে সময় সশরীরে ক্লাস হয়নি প্রায় দেড় বছর। এরপরও শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস বসতে পারেননি। এতে এলোমেলো হয়ে পড়ে শিক্ষাপঞ্জি। যার রেশ এখনও রয়ে গেছে। ফলে চলতি ২০২৫ সালেও এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত (পুনর্বিন্যাসকৃত) সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের গ্যাঁড়াকল থেকে এবার বেরিয়ে আসছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস, পূর্ণ সময় ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রবিউল কবির চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম ২০২৪ সালের আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ২০২৬ সালের মে-জুন মাসে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নির্ধারিত পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ সময়ে ও পূর্ণ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়টি দেশের সব শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহিতকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে এনসিটিবির নির্দেশনায়।