ইমন সরকার, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
ঈদুল আজহার পঞ্চম দিনেও দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের অন্যতম ফ্যামিলি বিনোদন কেন্দ্র গ্রীন অরণ্য পার্ক। সকাল থেকেই পার্ক জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ ও প্রাণবন্ত মানুষের ভিড়। পরিবার-পরিজনসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষের অংশগ্রহণে স্পষ্ট হয়েছে—এটি কেবল একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, বরং একটি নির্ভরযোগ্য পারিবারিক গন্তব্য।
হবিরবাড়ীর সিডস্টোর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত গ্রীন অরণ্য পার্ক গড়ে উঠেছে এক মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পার্কের পূর্ব পাশে বিস্তৃত চা-বাগানের সবুজ শোভা দর্শনার্থীদের মনকে করে প্রশান্ত। প্রকৃতি ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে গঠিত এই পার্ক এখন পরিবারকেন্দ্রিক বিনোদনের এক অনন্য নাম।
গ্রীন অরণ্য পার্ক নিজেদের গড়ে তুলেছে একটি “১০০% ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি” পার্ক হিসেবে, যেখানে পরিবার ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্কের ভিত্তিতে (যেমন প্রেমিক-প্রেমিকা) প্রবেশ অনুমোদিত নয়। এ বিষয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কঠোর ও সচেতন। নিরাপত্তা, শালীনতা এবং নৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এখানে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়, যা একটি সুস্থ সামাজিক বিনোদন ব্যবস্থার জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
ঈদের ছুটিতে অনেকে পার্ক অভ্যন্তরে নির্মিত নিরিবিলি, আধুনিক কটেজে রাত্রিযাপন করেছেন। এসব কটেজে রয়েছে নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং একটি আলাদা সুইমিং পুল, যা অতিথিদের দিয়েছে ব্যক্তিগত সময় কাটানোর এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
পার্কে রয়েছে দু’টি ক্যান্টিন: কটেজ অতিথিদের জন্য নির্ধারিত প্রাইভেট ক্যান্টিন, যেখানে পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক।
সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ক্যান্টিন, যেখানে দেশি ও বিদেশি খাবার, ফাস্ট ফুড এবং শিশুদের প্রিয় মেনু সহজলভ্য।
সবচেয়ে আলোচিত আকর্ষণ ছিল “ভূতের বাড়ি”, যেখানে অত্যাধুনিক আলোকপ্রক্ষেপণ, শব্দপ্রযুক্তি ও থিমেটিক উপস্থাপনায় তৈরি হয়েছে এক শিহরণ জাগানো অভিজ্ঞতা। প্রবেশের আগে ভয়, বের হওয়ার পর উত্তেজনা—এই রোলারকোস্টার অভিজ্ঞতা দর্শনার্থীদের মুখে মুখে।
শান্ত জলে ছোটদের জন্য প্যাডেল বোট, আর তরুণদের জন্য গতি ও ঢেউয়ের ছোঁয়া এনে দিয়েছে ইঞ্জিনচালিত স্পিডবোট। দুই অভিজ্ঞতাই ছিল দর্শনার্থীদের ভিন্নধর্মী আনন্দের অংশ।
উট পাখি, ময়ূর, ইমু, হরিণ ও ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর সমারোহে গঠিত প্রাণী কর্নার শিশুদের দিয়েছে আনন্দের সঙ্গে শেখার সুযোগ। এটি যেন এক চলমান চিড়িয়াখানা, যেখানে প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পায় শিশুরা।
বিশেষভাবে সাজানো Kids Zone-এ রয়েছে নানা রকম আকর্ষণীয় খেলনার আয়োজন। শিশুরা এখানে কাটিয়েছে এক আনন্দঘন ও নিরাপদ সময়।
ট্রেন রাইড, রকেট রাইড ও সুইং চেয়ার বড়দের জন্য তৈরি করেছে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। এছাড়া রয়েছে ছায়াঘেরা বাগান, বসার ছাউনি ও হাঁটার পথ—যা প্রবীণ দর্শনার্থীদের জন্য দিয়েছে এক প্রশান্তিপূর্ণ অবসর।
পার্কের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান মামুন বলেন: “আমরা চাইছিলাম এমন একটি পারিবারিক, নিরাপদ এবং মানসম্পন্ন বিনোদন কেন্দ্র গড়তে, যেখানে মানুষ শুধুই আনন্দ পাবে। দর্শনার্থীদের মুখের হাসি আমাদের কাজের প্রেরণা। ইনশাআল্লাহ, সামনে আরও চমক আসছে।”
ভালুকার স্থানীয় দর্শনার্থী আশিকুর রহমান তামিম বলেন: “আমাদের এলাকায় এমন একটি বিশ্বমানের পার্ক আছে, এটা শুধু আনন্দ নয়, এক ধরনের গর্বও বটে। পরিবার নিয়ে এখানে সময় কাটানো ছিল এই ঈদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
গ্রীন অরণ্য পার্ক শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, এটি এখন স্মৃতি তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম। কটেজ, সুইমিং পুল, ভূতের বাড়ি কিংবা প্রাণী কর্নার—সব মিলিয়ে পার্কটি আজ দেশের অন্যতম ফ্যামিলি ডেস্টিনেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এই ঈদের আনন্দ শুধু মুহূর্তের নয়, হয়ে থাকবে স্মরণীয় এক গল্প। যারা এসেছেন, তাঁরা পেয়েছেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আর যারা এখনো আসেননি—তাদের জন্য রইলো উষ্ণ আমন্ত্রণ, পরবর্তী আনন্দযাত্রায় অংশ নেওয়ার।