ইবি প্রতিনিধি: আবির হোসেন
কুষ্টিয়া শহরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ভাড়াকৃত ভবন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্লাবের বিগত দেড় বছরের বেশি সময়ের সাত লক্ষাধিক টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেই বিগত ২০ মাস ধরে ভবনটির মালিক বকেয়া ভাড়া পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এতে ভাড়া পরিশোধের জন্য মালিক পক্ষ থেকে গত ৫ মাসে তিন দফায় চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো ভাড়া চুক্তির মূল ফাইল হারিয়ে ফেলায় ভাড়া পরিশোধে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এই ফাইল কার কাছে আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এছাড়া ফাইল হারানোর দায় নিতে নারাজ সাবেক ও বর্তমান এস্টেট প্রধান। তবে অতিদ্রুত বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারা তলার দ্বিতলবিশিষ্ট একটি ভবন ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইবির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১লা ডিসেম্বর তিন বছরের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে ক্লাবের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মাসিক ভাড়া ৩৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া মাসিক ভাড়া প্রতিমাসে পরিশোধের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। চুক্তি নবায়নের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৯ মাসের ভাড়া দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর আর কোনো ভাড়া পরিশোধ করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বিগত ২০ মাসের বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ায় গত ৫ ডিসেম্বর ভাড়া পরিশোধ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর চিঠি দেয় মালিকপক্ষ।
এদিকে এস্টেট অফিস থেকে ভাড়া চুক্তির মূল ফাইলটি হারিয়ে গেছে। মূল ফাইল না থাকায় চিঠি পাওয়ার পর মালিকপক্ষ থেকে চুক্তিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে এস্টেট অফিস। পরে ফটোকপি ও চিঠি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধের জন্য বিল অনুমোদন চেয়ে অর্থ ও হিসাব শাখায় আরেকটি ফাইল পাঠানো হয়। কিন্তু মূল ফাইল না থাকায় তখন ফাইলটি আর এগোয়নি এবং প্রায় চার মাস হিসাব শাখায় পড়ে থাকে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে উভয় দফতরের কেউই এই ফাইলের কোনো খোঁজ নেয়নি। সর্বশেষ গত ৫ মে মালিক পক্ষ তৃতীয় দফায় চিঠি দিলে হুঁশ ফেরে সংশ্লিষ্টদের। পরে তড়িঘড়ি করে ফাইলের খোঁজ নিলেও ফাইলটি খুঁজে পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগায় অর্থ ও হিসাব শাখার কর্মকর্তারা।
এবিষয়ে গত ১৭ মে এস্টেট অফিসের প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, মূল ফাইল না থাকায় মালিকপক্ষ থেকে কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছিলাম। মূল ফাইল না থাকায় একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। মাঝখানে ওই ফাইলটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা, পরে খুঁজে পাওয়া গেছে। নতুন যে মাসগুলো অতিবাহিত হয়েছে সেগুলো যুক্ত করে দুয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় হিসাব শাখায় পাঠাবো। তবে এই কথা বলার দুই সপ্তাহ পেরোলেও ফাইলটি একই অবস্থায় হিসাব শাখায় পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
মূল ফাইল হারানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব পাওয়ার আগেই ফাইলটি হারিয়েছে। আগে দায়িত্ব পালনকারী লোকদের গাফিলতির ফলে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আর দায়িত্ব শেষে আগের প্রধান কিছু বুঝিয়েও দেয়নি।
তবে সাবেক এস্টেট প্রধান শামসুল ইসলাম এর দায় অস্বীকার করে বলেন, ফাইল তো থাকার কথা। আগে আমরা ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি। গায়ের জোরে একটা কথা বললেই তো হয় না। তারাই তো আমার থেকে বুঝে নেয়নি। তাহলে আমি নিজে থেকে বুঝিয়ে দিতে যাবো কেন? আর আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন আমাদেরও কেউ বুঝিয়ে দেয়নি।
এদিকে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আনার পাশা বলেন, মূল ফাইল না থাকলে পূর্বের পেমেন্ট যাচাই করা যায় না। এছাড়া চুক্তির ফটোকপি গ্রহণীয় নয়। তাই বিল অনুমোদন সম্ভব হয়নি। এসব জটিলতার কারণেই তখন ফাইলটি পড়ে ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি চলছে। অফিস খুললেই বকেয়া পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সাল থেকে ইউজিসি ক্লাব ভাড়ার নির্দিষ্ট বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় বিকল্প খাত থেকে অর্থ ম্যানেজ করতে হচ্ছে। এদিকে এস্টেট অফিস গাফিলতি করে নিয়মিত মাসিক বিল জমা না দিয়ে একসঙ্গে মোটা অঙ্কের বিল জমা দেয়, এতে জটিলতা বাড়ে। এস্টেটের উচিত মাসের বিল মাসে পরিশোধ করা।
এবিষয়ে ক্লাব ভবনের মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিন দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তারা চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে একজন ফোন দিয়ে মূল ফাইল হারানোর বিষয়টা জানালো। একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো মূল ফাইল কিভাবে হারায়!
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জটিলতা সমাধান করে দ্রুত বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য বলেছি। আর গাফিলতির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।