ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বুধবার উপাচার্য বরাবর অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরিত অভিযোগ দেয় বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তবে এরপর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিভাগটির কয়েকজন শিক্ষক। ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিগত তিন দিনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করেছে বিভাগের শিক্ষকরা। বিভাগের সভাপতি এবং একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক অভিযুক্ত শিক্ষকে বাঁচাতে জোর তদরিব করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বাঁচাতে তাদেরকে চাপ দিচ্ছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন। মঙ্গলবার বিভাগের সভাপতি ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি বিভাগের বাইরে না জানানোর অনুরোধ করেন। পরে ড. আনোয়ারুল হক আবারও তাদেরকে নিয়ে ম্যানেজ করতে আলোচনায় বসেন। এসময় তিনি ভুক্তভোগীদের দুপুরের খাবারের জন্য পনেরো হাজার টাকা দেন। কিন্তু ছাত্রীরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রী রৌশনী জান্নাত (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আজিজ স্যার আমাকে রিটেক পরীক্ষার আগের দিন তার রুমে ডেকে বলেন, তোমার ফিগার ভালো, শাড়ি পরলে ভালো লাগবে।’ তিনি আমাকে তার কথার মাধ্যমে বুঝালেন, সম্পর্ক ভালো রাখলে রেজাল্ট ভালো হবে। পরে তাকে স্পেস না দেওয়ায় আমার পরবর্তী সেমিস্টার থেকে রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে।
আরেক ছাত্রী নুরে ফাতিহা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আজিজ স্যার আমাকে মেসেঞ্জারে ফোন দিত। উদ্দেশ্য খারাপ হওয়ায় আমি তাকে আনফ্রেন্ড করে দিই। পরে ক্লাসে সবার সামনে আমাকে আজেবাজে কথা বলতেন এবং তার কোর্সে ফেল করানোর হুমকি দিতেন। বিভাগের প্রথম আমিই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু স্যাররা বিষয়টা সমাধান করে দিলেও তিনি আমার সঙ্গে একই আচরণ করে আসছিলেন। পরে ভয়ে আমি আর কোনো কথা বলিনি।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের ম্যানেজের বিষয়টি অস্বীকার করে বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বলেন, বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমি তাদেরকে নিয়ে বসেছিলাম। ঘটনা গোপন রাখা বা শিক্ষার্থীদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা। তবে তাদেরকে নিয়ে আমি লাঞ্চ করতে চেয়েছিলাম। আমিও ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে জানতে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমলে নিয়েছি। পদ্ধতিগতভাবে আমরা তদন্ত কমিটি করবো। তদন্তের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আজিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশ্লীল আচরণ এবং নানারকম প্রলোভন ও কুরুচিপূর্ন ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন। প্রলোভনে রাজি না হওয়ায় মানসিকভাবে হেনস্থা ও হুমকি দিতেন। তিনি ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে মেয়েদেরকে দাঁড় করিয়ে তাদের পোশাক, চেহারা, শারীরিক গঠন দিয়ে কুরুচিপূর্ন ও অশ্লীল মন্তব্য করেন। ক্লাসে বিভিন্ন কোর্স পড়ানোর সময় মেয়েদের শারীরিক গঠন ও মেয়েদের শরীবের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোকে ইংগিত করে অশালীন ও বিব্রতকর কথা বলতেন। এছাড়াও ছাত্রীদেরকে অর্থের প্রলোভন, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো করার প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য জোর করতেন।