আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় একটি সেতু আট বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। সেতুটি মেরামত বা পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উলিপুর উপজেলা শহরের হাসপাতাল মোড় থেকে বড়ুয়া তবকপুর হয়ে ইউনিয়নের রসুলপুর চুনিয়ারপার মোড় পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার পাকা সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্মাণ করেছিল। সড়কের পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে বড়ুয়া তবকপুর বাজারের কাছে নির্মিত সেতুটি নির্মাণের চার বছর পরই ২০১৮ সালের বন্যার পানির তোড়ে ভেঙে যায়। এতে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দীর্ঘ আট বছর ধরে চলা এই ভোগান্তিতে নারী, শিশু, রোগী ও ব্যবসায়ীদের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি।
সেতু-সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের মাঝে যেন বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। দুই পাশে আবাদি জমি বিলীন হয়েছে প্রায় এক একর। উলিপুর প্রান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে মানুষজন এসে সেতুর উত্তর প্রান্তে নামছেন। কেউ ড্রামের ভেলা করে, আবার কেউ কৃষিজমির আইল ধরে অপর প্রান্তে পৌঁছাচ্ছেন। এরপর অবশিষ্ট পথ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হচ্ছেন। যানবাহনহীন পরবর্তী তিন কিলোমিটার পথে সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আরিফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যখন বেশি পানি হয়, তখন ভয় লাগে কখন জানি পানিতে পড়ে যাই। মাঝে মাঝে স্কুলে যাই না।’
স্থানীয় রাহেনা বেগম (৫৫) নামে একজন বলেন, ‘সেতুটি কয়েক বছর ধরি এইভাঙি পড়ে আছে, কেউ দেখে না। গর্ভবতী ও অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে যাওয়া যায় না, অনেক কষ্ট করি নিয়ে যাওয়া লাগে। অনেকেই আবার বেশি অসুস্থ হয়। হামার সেতুটা ভালো করি দেন।’
অটোচালক আমিনুল ইসলাম (৭০) বলেন, ‘আট বছর ধরে সেতু ভেঙে পড়ে আছে। চলাচল করা যায় না। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। মালামাল পরিবহন করতে পারি না। একজন যদি অসুস্থ হয় তার চিকিৎসা করাতে একটা যে অ্যাম্বুলেন্স আসবে, সে উপায়ও নাই। ১৫-১৬ কিলোমিটার ঘুরে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লাগে। তখন ওই রোগীটার কী অবস্থা হয় বোঝেন! সবাই আসে আর দেখি যায়। আমাদের সেতুটা ভালো করি দেয় না।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই পথে তবকপুর ও চিলমারীর থানাহাট ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ২০১৮ সালে এটি ভেঙে যাওয়ার পর চেয়ারম্যান, এমপিসহ অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেতু নির্মাণসহ সড়কের অংশটি মেরামতের জন্য অনেক চেষ্টা-তদবির করা হয়েছে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের ড্রামের ভেলা দিয়ে চলাচল করতে হয়। আজ আট বছর ধরে এই ভোগান্তি চলছে।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বলেন, ‘নতুন করে সেতুর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’