ইমন সরকার, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহ তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল আলম জিয়েসের ‘টর্চার সেলের’ সন্ধান মিলেছে; যেখানে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার মধ্যে ওই ছাত্রদল নেতার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার সোমবার দুপুরে জিয়েসকে প্রধান আসামি এবং অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে তারাকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর সোমবার রাত ৯টার দিকে প্রধান আসামি হিজবুল আলম জিয়েসকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তারাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান।এর আগে রোববার রাতে জিয়েসের দুই সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।
তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়নের মাঝিয়ালী গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে ২৬ বছর বয়সী জিয়েস ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জিয়েসকে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মাঝিয়ালি গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, জিয়েস গত ৫ অগাস্টের পর চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে পড়েন। চলতি বছরের ৮ অগাস্ট বিকালে বানিহালা ইউনিয়নের মাঝিয়ালি বাজারে চুল কেটে টাকা না দিয়ে উল্টো দোকানি হক মিয়ার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে জিয়েস। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হক মিয়াকে মারধর করে। এক পর্যায়ে সেলুনে তালাও লাগিয়ে দেয়।
এ সময় হক মিয়ার বড় ভাই লাক মিয়াকেও তার দোকানে গিয়ে জিয়েস ও তার অনুসারীরা মারধর করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মাঝিয়ালি গ্রামের লোকজনের ভাষ্য, পরে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকারের আশ্বাসে পরদিন অর্থাৎ ৯ অগাস্ট বিকালে সেলুন খোলেন হক মিয়া। পরে সন্ধ্যার দিকে তাকে মারধর করে জিয়েস। হক মিয়া বিষয়টি মামুনকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মেরে রক্তাক্ত করা হয়।
মামুন সরকার বলেন, “ছাত্রদল তারেক রহমানের আদর্শে গড়া সংগঠন। আর সেই সংগঠনের পদ ব্যবহার করে জিয়েস ৫ অগাস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, তার টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন, মাদক সেবন এমন কোন অপরাধ নেই যে করে নাই।
“চুল কেটে নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি করা ছাত্রদলের আদর্শের পরিপন্থি। এর প্রতিবাদ করায় জিয়েস আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত করেছে। তাই বিচারের প্রত্যাশায় মামলা করেছি।”
মারধরের শিকার ব্যবসায়ী হক মিয়া বলেন, “চুল কাটার পর পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে জিয়েস। টাকা না দিলে মারধর করে দোকান থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে মামুন ভাইয়ের কথায় দোকান খুললে আবার আক্রমণ করে এবং মামুন ভাইকেও আঘাত করে।
“শুধু তাই না, জিয়েস নিজের পুকুর পাড়ে একটি টিনের ঘরে গড়ে তোলা টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে।”
এদিকে টর্চার সেলে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায় এক যুবককে তার জিয়েসের দুই সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহ মারধর করছে ভিডিও কলে জিয়েসকে রেখে। ওই যুবকের গলায় অস্ত্র ধরে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে চাঁদার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে ছাড়া হয়।
জিয়েসের নির্যাতনের শিকার মাঝিয়ালি গ্রামের জুয়েল ও রাসেল বলেন, জিয়েস প্রভাব খাটিয়ে তাদের কাছে টাকা পাবে মর্মে ভিডিও ‘স্বীকারোক্তি আদায়’ করতে মারধর করে। প্রাণনাশের ভয়ে তারাও স্বীকারোক্তি দেন। এ ঘটনায় সমালোচনার মধ্যে জিয়েসের দুই সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বানিহালা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবু তাহের বলেন, “জিয়েস সবসময় নেশার মধ্যে থাকে। বিভিন্ন সময় সে আমাকেও হুমকি দিয়েছে। “তার টর্চার সেল রয়েছে। সবকিছু নির্মূল করে তাদের সর্বোচ্চ বিচার করা হোক।”
ওসি মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, জিয়েসকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। আর তার দুই সহযোগীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।