নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার সাবেক এসআই এসলাম বর্তমান কর্মস্থল র্যাব-৭ এর বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার বর্ণনা :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত কলাবাড়ি গ্রামে ২০০৬ হতে ২০১২ পর্যন্ত সিডো নামে একটি এনজিও অত্যন্ত সুনামের সহিত চললেও গত ২০১৩ সালের পল্লী বিদ্যুৎ আন্দোলন এবং তৎকালীন কানসাটের সহিংস রাজনৈতিক কারণে মাঠে বিনিয়োগকৃত অর্থ রি-কভারি করতে না পারা এবং বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে সেগুলো চালু করতে না পারার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির মধ্যে পড়ে এবং প্রতিষ্ঠানটি বহু চেষ্টা করেও ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে এবং মামলার বাদী মোঃ আসাদুল ইসলাম এবং জেনারুল ইসলাম, সাং- কলাবাড়ি সহ কয়েক জনের পাওনা না থাকলেও তাদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে ২০১৪ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাবার পর গ্রাহকদের টাকা ফেরত এর জন্য ২৪/০৯/২০১৪ ইং তারিখের দৈনিক লাল গোলাপ এবং ৩০/০৯/২০১৪ ইং তারিখের সাপ্তাহিক সোনামসজিদ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধের জন্য পাশ বইয়ের ফটোকপি চাওয়া হয় এবং সকলেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তা জমা দেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে পত্রজারীর মাধ্যমে জানানো হয় যে, তিন থেকে ছয় বছরের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করা হবে। পত্রের উল্লেখিত সময় অনুযায়ী ২০২১ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে সকলের দেনা পাওনা পরিশোধ করা হয়, এমনকি যারা পাশ বই দেখাতে পারে নাই মুখের কথাতেও তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়। পরিশোধের এ প্রক্রিয়াটি ওপেন করা হয় কোন গোপনীয়তা রক্ষা করে করা হয়নি।
কেন মামলা করা হলো :
মামলার বাদী মোঃ আসাদুল ইসলাম, সাং- বাজিতপুর ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে লোকজন নিয়ে গিয়ে জনাব মোহাম্মদ আলীর বাড়ি এবং অফিসের মালামাল নিয়ে গেলে তিনি ০৫/১১/২০১৫ ইং তারিখে মোঃ আসাদুল ইসলামকে উকিল নোটিশ পাঠান। লুটকৃত অফিসের এবং বাসার মালামাল এর মধ্যে গ্রাহকদের ঋণের বিপরীতে চেক, পাশ বই সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট করেন এবং সঙ্গে করে নিয়ে যায় আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। তিনি চুরির সাথেও জড়িত। উক্ত বাড়ি এবং অফিসের মালামাল লুটপাট, চুরি সহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে ২০২৪ সালে মামলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে মোঃ আসাদুল ইসলাম মামলা থেকে নিজেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ২১/১১/২০২৪ তারিখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ :
মোঃ আসাদুল ইসলাম মিথ্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন ০৩/১১/২০২৪ তারিখে তিনি তিনজন সাক্ষীসহ গিয়ে দেখতে পান জনাব মোহাম্মদ আলী কলাবাড়ীর সিডো অফিসে বসা আছেন এবং তিনি টাকা চেয়েছেন জনাব মোহাম্মদ আলী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন টাকা দিতে পারবো না মামলা করে টাকা নিয়ে নাও। এজাহারের নথিতে ২০১২ সাল থেকে লেনদেনের কথা বললেও সে শুধুমাত্র পাশ বইয়ের যে পাতায় তার জমার পরিমাণ লেখা আছে ঠিক সে পাতার ফটোকপি মামলার নথিতে জমা দেন। অথচ তিনি বিভিন্ন সময়ে সুদসহ ১২ লক্ষ টাকা ফেরত নিয়ে গেছেন তার সম্পূর্ণ পাশ বইয়ের বিবরণ দেখলে বুঝা যাবে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটির আরজি গ্রহণ করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে সরোজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। শিবগঞ্জ থানার সাবেক এসআই এসলাম মামলাটির তদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেন। এই রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন বাদীর বর্ণনা অনুযায়ী অফিস ওখানে আছে এবং অফিসের কার্যক্রম চলমান আছে এবং দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি তিনি রেকর্ড করেছেন। ঘটনাটি সত্যি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলা করা থেকে তদন্ত পুরা প্রক্রিয়াটি এমনভাবে করা হয়েছে যেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি এমনকি অফিসের আশপাশের কেউ বিন্দু মাত্র জানে না।
দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার অনুসন্ধানী তথ্য :
বিষয়টি নিয়ে আদালত থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে ২৫/০৫/২০২৫ ইং তারিখ দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার ক্রাইম টিম অনুসন্ধান শুরু করলে বেরিয়ে আসে এসআই এসলামের ভয়ঙ্কর প্রতিবেদন জালিয়াতের বিষয়টি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২০১৪ ইং সালের মে মাস থেকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই দীর্ঘ ৯-১০ বছর ধরে সেখানে আচারের ফ্যাক্টরি রয়েছে। আচারের ফ্যাক্টরির কর্মচারী সায়েরার (লাল বুড়ি) সাথে কথা বলে জানা যায় এখানে কোন সিডো এনজিওর অফিস নাই এবং এনজিওর মালিক মোহাম্মদ আলী দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কখনও এখানে আসেননি। আচার ফ্যাক্টরির ঠিক সামনে চায়ের দোকানদার নাসিমও একই বক্তব্য দেন। দুই জনেরই ভিডিও রেকর্ড রয়েছে।
আরও অধিকতর অনুসন্ধানের স্বার্থে ২ নং সাক্ষী মোঃ তোহুরুল ইসলাম সাং- বাজিতপুর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি গত সাত মাস আগে সেখানে যায়নি এবং কোন পুলিশ অফিসার আমার সাথে দেখাও করেনি বা আমার কোন জবানবন্দী আমি তাকে দেইনি। যার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে।
এই নিয়ে মামলার ৩ নাম্বার সাক্ষী মোঃ শহিদুল ইসলামকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই কথা বলেন যে, তিনি অফিসে যান নাই তিনি তাকে দেখেন নাই এবং বিগত সাত আট বছরেও তিনি ওই দিকে যাননি। পুলিশের বক্তব্য নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন আমি কোন পুলিশ অফিসারের নিকট কোন জবানবন্দী দেইনি বা কেউ আমার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। কল রেকর্ড রয়েছে।
মামলার ১ নাম্বার সাক্ষী মোঃ সামিরুল ইসলাম এর বাড়িতে এবং তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দোকানে তাকে পাওয়া যায়নি যার কারণে তার এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা যায় ৩ জন সাক্ষীই তার আত্মীয়।
এ অনুসন্ধানের কারনে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার মোঃ দুলাল আলিকে মামলার বাদী মোঃ আসাদুল ইসলাম ফোন দিয়ে তার সাক্ষীদের সাথে কথা বলার জন্য হুমকি দিয়ে বলেন আপনি আমার সাক্ষীদেরকে হুমকি দিয়েছেন আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। যার কল রেকর্ড রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে এসআই এসলামকে ফোন করে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে সরোজমিনে গিয়ে তদন্তের কথা বললেও পরে অভিযুক্তের সাথে দেখা করে কথা বলবেন বলে জানান। যার কল রেকর্ড রয়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কিবরিয়াকে জানানো হলে তিনি বলেন, এস আই এসলাম বর্তমানে এখানে কর্মরত নাই। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তার দায় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যান।
একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায় এড়ানোর বিষয়টি সচেতন মানুষ এবং আইন অঙ্গনের মানুষ মনে করেন যে, থানার যেকোন কর্মকান্ডের জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এর দায় এড়াতে পারেন না।
মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল নিয়ে ঢাকা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোঃ মাশফুরুল হক বলেন দুটিই আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (পর্ব-০১)।
এই নিয়ে আরও খবর আসছে ভিডিও নিউজ এবং পর্ব ০২ এ।