নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণ, সংস্কার ও নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, কাজে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের ইট, বালু ও খোয়া। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল মেলেনি।
রাজশাহী বিভাগের ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প’-এর আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের দঘা বাজার থেকে শিবনগর ও মোহনবাগ হয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ৬.১ কিমি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
কানসাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক নম্বর খোয়ার বদলে দুই-তিন নম্বর খোয়া দিচ্ছে। এভাবে করলে রাস্তাটি বেশি দিন টিকবে না।’ রাস্তাটিতে বারবার বাধা পড়ছে। অনেক স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার জায়গা বাদ দিয়ে আমাদের নিজের জমি দিয়ে রাস্তা বানানো হচ্ছে—এ রকম অভিযোগ অহরহ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে কাজ চলছে। খোয়া এমন নরম যে হাতে চেপে ভেঙে যায়। এসব দিয়ে রাস্তা বানালে এক বর্ষা গেলেই সব ধসে পড়বে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যেন রাস্তাটি নিম্নমানের ইট-খোয়া না দিয়ে ভালো ইট-খোয়া দিয়ে নির্মাণ করা হয়—এটাই আমাদের দাবি।’
একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুদ্দিন বলেন, ‘এই রাস্তায় প্রতিদিন আমাদের বাচ্চারা স্কুলে যায়। আমরা চাই টেকসই রাস্তা হোক, কিন্তু এখন যা দেখছি, তাতে ভরসা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য জায়গা থেকে নিম্নমানের ইট ভেঙে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কালার পরিবর্তন করে নিয়ে আসছে, যা মানসম্মত নয়। দেখে মনে হচ্ছে ভালো, কিন্তু বাস্তবে তা ভালো নয়।’
সম্প্রতি সাইট পরিদর্শনে গিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জি. পি. চৌধুরী বেশ কিছু ত্রুটি শনাক্ত করেন। মাটি ও সাব-বেজ ঠিকমতো কম্প্যাক্ট হয়নি, খোয়া ও বালু স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নয় বলেও তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে রাস্তার জমি অধিগ্রহণ নিয়েও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কানসাট ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের জমিতে রাস্তা সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে, যদিও অপর পাশে ফাঁকা সরকারি জমি রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, কাজ বন্ধ রেখে উপকরণ পরীক্ষা করতে হবে এবং সঠিকভাবে জমি নির্ধারণ করে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সেলিম রেজা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিম্নমানের ইট-খোয়া রাস্তার সংস্কারে ব্যবহার করা হচ্ছে না। নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হারুন-রশিদ বলেন, ‘রাস্তাটি প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। আগের অনেক মালামাল ছিল, যেটি সরকার তাদের কাছে বিক্রি করেছে। স্বাভাবিকভাবে সেই মালামালগুলো ব্যবহার করা হবে। এর বাইরে যে সব নতুন মালামাল রয়েছে, আমরা সেগুলো দেখে নিচ্ছি। তবুও যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে, তাহলে সেটা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।