অনলাইন ডেস্ক :
এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকার। এ লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়া পৌঁছেছে। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন—মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া এবং উপসচিব মো. সারওয়ার আলম।
আজকের বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও একটি আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকবে বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় চালু করা। বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ও নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হবে। এবার বৈধ সব এজেন্সিকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
তবে এখনই নতুন কোনো সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের সুযোগ নেই, কারণ ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত বিদ্যমান এমওইউ-এর মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল রয়েছে। এই স্মারকে মালয়েশিয়া সরকারকে এজেন্সি নির্বাচনের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে স্মারকটির কিছু শর্ত সংশোধনের।
২০২৪ সালের শুরুতেই মালয়েশিয়া তাদের শ্রমবাজার বন্ধ ঘোষণা করে, যার আওতায় ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত হয়। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে শ্রমিক নিয়োগে ‘চক্র’ গঠনের অভিযোগ উঠেছিল তখন।
মালয়েশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারটি আবার চালু করার পদক্ষেপ নেয়। এ লক্ষ্যে কয়েক দফা মালয়েশিয়াকে চিঠি পাঠানোর পর অবশেষে গত মাসে তারা বৈঠকের সম্মতি জানায়।
গত মাসে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, মালয়েশিয়া যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক ২১ ও ২২ মে ঢাকায় আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এতে সম্মতি জানিয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এক বছরে গেছেন সর্বাধিক—সাড়ে তিন লাখের বেশি।
এর আগেও শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে একাধিকবার। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে প্রথম দফায় প্রায় চার লাখ কর্মী পাঠানোর পর বাজার বন্ধ হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রায় তিন লাখ কর্মী গিয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালিকদের ধারণা, মালয়েশিয়ায় আরও কয়েক লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব। তবে মূল বাধা অভিবাসন ব্যয়।
২০২২ সালে বাজার খোলার সময় সরকার কর্মীপ্রতি ব্যয় নির্ধারণ করেছিল ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু পরে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসে, প্রকৃত ব্যয় পাঁচ লাখ টাকারও বেশি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ২৩টি বেসরকারি সংগঠন সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করেছে, যাতে পুরোনো দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
অভিবাসন খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনীম সিদ্দিকী মনে করেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় খোলা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি যেন সীমিতসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না চলে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের খরচ সীমিত রাখার ওপরও জোর দেন তিনি।