ইমন সরকার, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহ শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় এ কর্মসূচি। শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছাত্র-জনতা ও দলীয় নেতাকর্মীরা শহরে জড়ো হন, ফলে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় জনস্রোত।
দুপুর আড়াইটায় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা হোটেল মোস্তাফিজে এসে পৌঁছান। সেখানে সংক্ষিপ্ত বিশ্রামের পর তারা ময়মনসিংহে জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
পরে শহীদ সাগর চত্বর থেকে একটি পদযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল শহীদ মিনার চত্বরে নির্মিত মূল মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহে ৪১ জন শহীদ হয়েছেন। তাঁদের কেউ গার্মেন্টস শ্রমিক, কেউ দিনমজুর। তাঁদের জীবনের বিনিময়ে নতুন দেশ পেয়েছি। এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই, ব্রহ্মপুত্র নদকে মেরে ফেলা হয়েছে, বিগত সরকার শুধু মানুষের ক্ষতি করেনি, নদকেও ধ্বংস করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি, ময়মনসিংহবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করব। ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করব। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না। নেতা–কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন।
মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এনসিপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে। আমাদের লাখ লাখ কর্মী ও নেতার দরকার নেই। যারা তেলবাজি ও সেলফিবাজি করছেন, তাঁদের দরকার নেই। আগে ঘর ঠিক করতে হবে।
হাসনাত আরও বলেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে গিয়ে মানুষের কাছে এনসিপির প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। উৎসুক জনতা দিয়ে আমাদের লাভ নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে সবকিছু মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, খুনি হাসিনা যখন আন্দোলনের মাঠে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, তখন আমরা কী ওয়াকআউট করেছিলাম? আমাদের ভাইরা যখন আহত হয়েছিল, তারা কী তখন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ভেতর থেকে ওয়াকআউট করেছিল? কিন্তু আজ শহীদদের রক্ত আর আহতদের অঙ্গহানির ওপর দাঁড়িয়ে যখন আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছি, তখনই দেখতে পাচ্ছি একটি দল (বিএনপি) ওয়াকআউট করছে। আপনারা আজকে ওয়াকআউট করেছেন, ফিরে এসেছেন আমরা আপনাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু শহীদদের রক্তের সঙ্গে, আহতদের রক্তের সঙ্গে ওয়াকআউট করা যায় না।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী আরও বলেন, ‘শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন ছিল এই বাংলাদেশে আমার-আপনার ভাই সুচিকিৎসা পাবে, একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হবে। কিন্তু আমরা যখন বাংলাদেশকে নতুন এক পদ্ধতিতে দেখতে চাইলাম, তখন বারবার বাধার মুখে পড়েছি। আমাদের সামনে একটিই লক্ষ্য বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার দরকার। আমরা একটি স্লোগান দিয়ে থাকি, সেটি হলো: এই মুহূর্তে দরকার বিচার আর সংস্কার। সংস্কারের মধ্য দিয়েই নতুন বাংলাদেশ গঠিত হবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
এছাড়া আরও বক্তব্য দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম রবিন এবং জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটি ময়মনসিংহের প্রধান বাস্তবায়নকারী মো. ইকরাম এলাহী খান, যুগ্ম বাস্তবায়নকারী অ্যাডভোকেট এ টি এম মাহবুব আলম, মাহমুদুল হাসান সোহেল মোজাম্মেল, সদস্য ফুয়াদ খানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব ও এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের পদযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
পদযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে শহরের দিকে রওনা দেন। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে স্লোগানে মুখর ছিল ছাত্র-জনতা। শহরের নানা স্থানে এনসিপির পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টাউন হল ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতেও ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি।
এনসিপির স্থানীয় নেতারা জানান, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ কর্মসূচির তাৎপর্য অনেক। তারা মনে করেন, এটি সাধারণ মানুষের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক চেতনা জাগিয়ে তুলবে।