ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ইমন সরকার
গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা রামবুটান। চীন, মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে যে দৃশ্য দেখা যায়, এবার সে দৃশ্যই ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায়। উপজেলার বিরুনিয়া ইউনিয়নের গোয়ারি গ্রামে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রামবুটান বাগান—যা কৃষি সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
প্রায় ৬ একর জমিতে বিস্তৃত এ বাগানে রয়েছে ২১২টি রামবুটান গাছ, যেগুলোর প্রতিটিতেই এবার ফল ধরেছে। রামবুটান দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও বাইরের অংশে থাকে নরম কাঁটা। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে হয়ে ওঠে টকটকে লাল। ভেতরের সাদা শাঁসটি একেবারে লিচুর মতোই রসাল ও সুস্বাদু। ফলটি শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে নানা ঔষধিগুণ ও পুষ্টিমূল্য।
২০২০ সালে দুই বন্ধু শেখ মামুন ও আশরাফ উদ্দিন মিলে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করেন ৪০০টি রামবুটান গাছের চারা। শুরুটা সহজ ছিল না—প্রথম দিকে রাসায়নিক ব্যবহারে কিছু গাছে দেখা দেয় মড়ক। তবে ধীরে ধীরে শ্রম ও নিষ্ঠার ফল মিলতে শুরু করে। ২০২৩ সালে প্রথমবার গাছে ফল আসে, যদিও তখনো বাজারে পরিচিত না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছিল।
এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। ফলটির স্বাদ ও আকর্ষণ জানার পর স্থানীয় বাজারে তৈরি হয়েছে চাহিদা। শুধু তাই নয়, বাগানটি ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন সম্ভাবনাও। আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ ঘুরতে এসে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
বাগানে ঘুরতে আসা স্থানীয় কলেজছাত্র সাব্বির হাসান বলেন,
“রামবুটানের নাম শুনেছিলাম আগে, কিন্তু কখনো দেখিনি। এখানে এসে গাছ থেকে পেড়ে খাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। স্বাদটাও দারুণ—একেবারে বিদেশি মানের।”
ত্রিশাল থেকে ফল কিনতে আসা গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন বলেন,
“আমার ছেলে এক ইউটিউব ভিডিওতে এই ফল দেখে খেতে চেয়েছিল। এখন এখানে এসে গাছ থেকে তোলা তাজা ফল কিনে দিতে পারছি। ওর খুশি মুখটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
গফরগাঁও থেকে ভ্রমণে আসা শিক্ষক মাহমুদ হাসান বলেন,
“পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। পরিবেশটা খুবই শান্ত। এমন একটা প্রাকৃতিক ফলের বাগান শুধু কৃষি নয়, পর্যটনেরও বড় দৃষ্টান্ত হতে পারে।”
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভালুকার লাল মাটি রামবুটান চাষের জন্য উপযোগী। চলতি মৌসুমে ২১২টি গাছ থেকে প্রায় ১০ মেট্রিক টন ফল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
রামবুটানের বছরে দুটি ফলের মৌসুম—জুন-জুলাই এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর। এই সময়গুলোতেই বাজারজাতের জন্য ফল উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের মাটিতে এই বিদেশি ফলের সফল চাষ শুধু উদ্যোক্তাদের জন্য নয়, দেশের কৃষি খাতের জন্যও এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা। রপ্তানি সম্ভাবনা, কৃষি বৈচিত্র্য ও পর্যটন উন্নয়নের দিক থেকে এটি হতে পারে একটি মাইলফলক প্রকল্প।