ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ভালুকায় বনবিভাগের প্রায় পাঁচ’শ কোটি টাকা মূল্যের একশত তিন একর ৬৩ শতাংশ বনভূমি আমমোক্তা রেজিস্ট্রি দলিল করে নিয়েছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। অসাধূ দলিল লেখকের মাধ্যমে সাবরেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে বনের জমি দলিল রেজিস্ট্রি করে ওই চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শিল্পাঞ্চল মেহেরাবাড়ি গ্রামে।
জালিয়াত চক্রে জড়িতদের বিরদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বনবিভাগ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন ভালুকা উপজেলার মেহেরাবাড়ি মৌজার সিএস নম্বর ১৪৫ দাগে ১৫ এক ৭৩ শতাংশ, ১৫০ দাগে ৩৮ একর ৮৬ শতাংশ, ১৬৩ দাগে ১৯ একর ৩৫ শতাংশ, ১৬৮ দাগে ১০ একর ৮৩ শতাংশ ও ১৭৫ দাগে ১৮ একর ৮৬ শতাংশ। এই পাঁচটি দাগের সংরক্ষিত মোট একশত তিন একর ৬৩ শতাংশ বনভূমি একটি আমমোক্তা দলিলে (নম্বর-৬১৩৩, তারিখ ২২-৬-২৩) রেজিস্ট্রি করা হয়। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের খালেকুজ্জামান ওরফে খালেক পুলিশ, আব্দুল্যাহ আল মামুন, শাহজাহান, আশরাফুল ইসলাম, আফির হোসেন, বদিউজ্জামান, সাইদুল ইসলাম, আতাউজ্জামান, রিয়াজ আহামেদ, কামরুজ্জামান গং জমির মালিক বা আমমোক্তার দাতা হিসেবে মনিরুল হক, শামিমুল হক, কামাল হোসেন, মইনুল ইসলাম, আশরাফ হোসাইন, তারিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, সরকার মো: জহুরুল ইসলাম, মনির হাসেন, সুমন সরকার, উমর ফারুক, রবিউল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, এনামুল হক, সমেন কুমার সাহা, ইয়াসির আরাফত, ফারহানা ইসলাম, শাহ জালাল, নাজনীন সুলতানা ও খাইরুল মমিনকে (দুলাল) ওই জমিটির অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি প্রদান করেন। আর ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো: রনি মিয়া তৎকালীন নান্দাইলের সাররেজিস্ট্রার ইমরুল কায়েস ভালুকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ওই চক্রটি প্রায় পাঁচ’শ কোটি টাকা মূল্যের একশত তিন একর ৬৩ শতাংশ বনভূমি আমমোক্তা রেজিস্ট্রি দলিল করে নেন।
নাম প্রকাশ নার করার সর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত পিয়ন (উমেদা) শাহাদাত হোসেন ও পিয়ন আপেল মাহমুদের হাত দিয়েই প্রায় প্রতিটি দলিলই রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। আর যে সকল দলিলে বনবিভাগের দাবি বা ডিসির খতিয়ান ভূক্ত, সেসকল জমি কমিশনের মাধ্যমে তারা দু’জনই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যদিও কমিশনের দলিলগুলো সাবরেজিস্ট্রার নিজে উপস্থিতিতে হওয়ার কথা। শাহাদাত ও আপেলের মাধ্যমে সাবরেজিস্ট্রার ইমরুল কায়েসের এক বছর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন কালে অসংখ্য দলিল রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
১ নম্বর জমি দাতা খালেকুজ্জামান জানান, গ্রহীতারা তাদের কাছ থেকে একশত তিন একর ৬৩ শতাংশ জমি কিনে নিয়েছেন এবং বায়না হিসেবে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা পরবর্তিতে দেয়ার কথা। এক প্রশ্নে দাতা জানান, জমিটি তার নানা সাবেদ আলী মন্ডল গংদের কাছ থেকে তারা ওই মৌজায় ৫ টি দাগে ১১১ একর জমির মালিকানা দাবি করলেও তাদের নামে কোন ধরেণের নামজারি বা জমাখারিজ নেই।
জমিটির অপর দাতা ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আব্দুল্যাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগের সাথে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি গণমাধ্যমের সাথে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি।
গ্রহীতা মনিরুল হক জানান, এটি বনভূমি নয়, উক্ত জমিটি জমির মালিকদের কাছ থেকে তারা কিনে নিয়েছেন।
দলিল লেখক মো: রনি মিয়ার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দলিল লেখক নয় বলে জানান।
ভালুকার তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার ইমরুল কায়েসের মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভালুকার বর্তমান সাবরেজিস্ট্রার আনোয়ারুল হাসান জানান, বনের জমি অমমোক্ত বা ডিমারগেশন না করলে রেজিস্ট্রি করার কোন বিধান নেই এমনকি হস্তান্তরযোগ্য না। দলিলটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট অফিসারই ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম ইব্রাহীম সাজ্জাত (সহকারী বন সংরক্ষক ‘এসিএফ’) জানান, উক্ত দলিলে যেসকল দাগ উল্লেখ আছে, তাতে ১১১ একর ৮২ শতাংশের মধ্যে ১০৭ একর ৭৪ শতাংশ জমিই বনভূমি। এভাবে রাষ্ট্রেয় সম্পদ সংরক্ষিত বনভূমি ক্রয় বিক্রয় এবং তা সাবরেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক অনুমোদন অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এবং আইনের ভয়াভহ রকমের লঙ্গন। উক্ত দলিল সমূহ বাতিলের জন্য সাবরেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত ভাবে অনুরোধ জানাবো এবং যারা উক্ত জালিয়াতির সাথে জড়িত, তাদের বিরদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।