আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
গেলো দুই সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে করালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদের তাণ্ডব যেন কিছুতেই থামছে না। একে একে গ্রাস করছে বসতবাড়ি, নিঃস্ব হচ্ছে নদের তীরবর্তী মানুষজন। ভিটেমাটি হারানো এসব মানুষের নেই মাথা গো ঠাঁই। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সেখানকার বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এবং চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতি এলাকায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেড় শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে আবাদি জমি, গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তবে এসবে ভ্রূক্ষেপ নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এলাকায় গত ১৫ দিনে অন্তত ১০০ বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকায় আবাদি জমি, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা। গত বছর এই এলাকায় ৪০০ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে বলেও জানায় তারা।
ভাঙনের শিকার মোকলেছুর রহমান, সেকেন্দার আলী ও ফুল মিয়ার ভাষ্য, ‘আমরা কয়েক বছর থেকে এই চরে বসবাস করে আসছি। গত বছরও এখানে ব্যাপক ভাঙন হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবারও নদীভাঙনের শিকার হচ্ছি। এই চরে কয়েকশ পরিবার বসবাস করে। আমরা চাই দ্রুত চরটি বেঁধে আমাদের বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হোক।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদের পানি একটু কমলেই ভাঙন শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন থেকে শতাধিক বাড়িঘর ভাঙছে, আমার নিজের বাড়িও নদীর পাড়ে, তাই সরিয়ে নিয়েছি। আমরা ৩০ বছর থেকে এই চরে বসবাস করি। ভাঙনের ফলে আমাদের এই চর থেকে অন্য চরে যেতে হচ্ছে।’
এদিকে চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত চর শাখাহাতি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অর্ধ শতাধিক বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের শিকার এসব মানুষ বিভিন্ন চর ও দীপ চরে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ মিয়া, হারুন মিয়া ও সবুর আলী জানান, ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত চর শাখাহাতি। এই গ্রামগুলোর চারদিকে ঘিরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। গত ৩৫ বছর ধরে এই গ্রামে লোকজন বসবাস করে আসছে। চলতি বছর তীব্র ভাঙনের ফলে গ্রামটি মানচিত্র থেকে বিলীন হওয়ার পথে। এখানকার মানুষের অবশিষ্ট বাড়িঘর, আবাদি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নিলেও তা আর কাজ করছে না।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এরইমধ্যে ৫০-৬০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি। রোববার জেলায় আছি, বিষয়টি নিয়ে তাদের (পাউবো) সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।
তবে দায়সারা বক্তব্য কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের। তিনি বলেন, চর শাখাহাতিতে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। তবে কবে নাগাদ হবে সেটা বলতে পারেননি তিনি।
এছাড়া নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এলাকায় ভাঙনের বিষয়টি জানা নেই তার। সেখানে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।