অনলাইন ডেস্ক :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সম্ভাব্য সাক্ষাৎকারকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যখন থেকে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তখন থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন—তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এটা এখন বাস্তব হয়েছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারম্যান সাহেব অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও নিজে অংশ নিয়েছেন। ১৩ তারিখ লন্ডনের সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা। আমি মনে করি, এটা হতে পারে একটি টার্নিং পয়েন্ট। যদি সঠিকভাবে হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
সাক্ষাতের ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিক কোনো আভাস পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, তারা রাজনৈতিকভাবে খুব অভিজ্ঞ নয়। যদিও তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুণী, তবে রাজনৈতিক উইজডমে কিছু ঘাটতি আছে। আন্তরিকতার অভাব আছে বলে মনে করি না। তাঁরা চেষ্টা করছেন, কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো বড়।”
তিনি বলেন, “১০ বছর ধরে চলা এক ফ্যাসিস্ট শাসনের কারণে বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। এখন নতুন করে সবকিছু তৈরি করা সহজ নয়। সবাই চেষ্টায় আছে, কেউ কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। গণতন্ত্রে উত্তরণের এই কালপর্বে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। জাতীয় ঐক্যই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
আগামী বছরের এপ্রিল মাসে নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রোজা, ঈদ, গরম—সব মিলিয়ে এপ্রিল মাস নির্বাচন আয়োজনের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত সময়। আমি প্রথম দিনই বলেছি—টাইম ইজ নট গুড ফর ইলেকশন। গরমে মিটিং করা যাবে না, খরচ দ্বিগুণ হবে। আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় মূলত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই হয়।”
তিনি বলেন, “আমরা শুধু নির্বাচন চাই না, চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্য সংস্কারের কথা বলেছি বহু আগে থেকে। ২০১৮ সালে ভিশন ২০৩০ দিয়েছি। তারপর যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে সাত দফা দিয়েছি। এসব দাবি নিয়ে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু এখন সরকার ও একশ্রেণির গোষ্ঠী বিএনপিকে শুধু ‘নির্বাচন বিরোধী’ বানাতে চায়। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বহু আগেই বলেছি—কেয়ারটেকার সরকারের বিকল্প নেই। বিদেশিরাও আগে এটিকে ডেড ইস্যু বললেও এখন বাস্তবতা বুঝছে। আজকের প্রেক্ষাপটে এটি ‘লাইভলি ইস্যু’ হয়ে উঠেছে। কেয়ারটেকার ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।”
তিনি অভিযোগ করেন, “বিএনপিকে দুর্বল করার নানা অপচেষ্টা হয়েছে—নেতাদের হত্যা, জেল, নির্যাতন। ছাত্র-যুবকদের চোখ উপড়ে, নখ তুলে অত্যাচার হয়েছে। তারপরও বিএনপি টিকে আছে। কারণ এটি একটি বাস্তবতাজাত রাজনৈতিক শক্তি।”
ডেমোক্রেসি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি। এটা রাতারাতি আসে না। পশ্চিমে শত শত বছর ধরে ডেমোক্রেসি চর্চা হয়েছে। আমাদের এখানেও ধৈর্য ধরে চর্চা করতে হবে। পার্লামেন্টে না গেলে রাজনৈতিক দলগুলো কাজের সুযোগ পায় না। তাই দায়িত্বশীল রাজনীতি গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে।”
তিনি সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সক্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানান, “জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করবেন না। আমরা গণতন্ত্র চাই, ভোটাধিকার চাই, সংস্কার চাই। এই যাত্রা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখা দরকার।”
সরকার কখনো ফেব্রুয়ারি, কখনো এপ্রিল মাসে নির্বাচন করার কথা বলছে, এ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি এখন একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করার সুযোগ পায় না, তাই তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দরকার।”
সংবাদ সম্মেলনজুড়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়, দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ‘পূর্ণ অথরিটি’ দিয়ে পাঠানো হয়েছে এই সাক্ষাতে অংশ নিতে। এই সাক্ষাৎ এবং রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।