আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজীবপুর ও উলিপুর উপজেলা অংশে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরে ভাঙন রোধে জরুরি জিও ব্যাগ ফেলার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান ও সাব-ঠিকাদার আবু সাইদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। প্রতিকার চেয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন রৌমারীর চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী ভাঙন কবলিত এলাকার রহিজ উদ্দিন।
সম্প্রতি সরেজমিন জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে রৌমারীর চরশৌলমারী ইউনিয়নের সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, চরগেন্দার আলগা, সোনাপুর, হবিগঞ্জ বাজার এলাকা, রাজীবপুরের কোদালকাটি এলাকা ও উলিপুর উপজেলার গেন্দার আলগা এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীর ভাঙছে। এতে বিলীন হয়ে যায় বসতভিটা, ফসলি জমি, হাট-বাজার ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এ কারণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে ভাঙন রোধে জরুরি কাজের আবেদন করেন এলাকাবাসী। তাৎক্ষণিক ভাঙন রোধে জরুরি কাজের অনুমোদন দেন তিনি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ওইসব এলাকার মানুষ। কোথাও ফেলা হয়েছে জিও ব্যাগ, আবার কোথাও ফেলা হয়নি। এখনও চরগেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি এলাকায় ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি।
ভাঙন কবলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হবিগঞ্জ বাজার এলাকার কামাল হোসেন, ঘুঘুমারী এলাকার রহিজ উদ্দিন ও সুখেরবাতি এলাকার নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন, হবিগঞ্জ বাজার এলাকায় ২৭ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৬৪৯টি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এক হাজার ৩৫১টি জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। ঘুঘুমারী এলাকায় ১২ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার ৫০০টি ফেলা হয়েছে। সাড়ে চার হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। সুখেরবাতি এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার জিও ব্যাগ। এর মধ্যে ফেলা হয় ৯ হাজার ৯৩০টি। সাত হাজার ৭০টি জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। কোদালকাটি এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪১ হাজার জিও ব্যাগ। এর মধ্যে ফেলা হয় ৪০ হাজার ৪২৭টি। এখনও ফেলা হয়নি ৫৭৩টি জিও ব্যাগ।
তারা বলেন, জিও ব্যাগ হিসাবের জন্য প্রত্যেক এলাকায় একজন করে প্রতিনিধি দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের না জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের যোগসাজশে প্রত্যেক এলাকায় বরাদ্দের চেয়ে কম ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন নিজেরাই হিসাব করে ব্যাগের সংখ্যা জানিয়ে প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর নিয়েছেন। এ ঘটনায় গত ২১ সেপ্টেম্বরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভাঙন কবলিত এলাকার রহিজ উদ্দিন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ বাজার, ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি ও কোদালকাটি এলাকায় তদন্ত করতে আসেন রংপুর পানি উন্নয়ন (পাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
স্থানীয়রা জানান, ঘুঘুমারী এলাকায় তদন্তে এসে উল্টো অনিয়মের পক্ষেই সাফাই গাইলেন পাউবোর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
চরগেন্দার আলগা এলাকার সোয়েব আক্তার বলেন, পাউবোর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান তদন্তে এসে প্রকাশ্যে বলেছেন, যদি নদী ভাঙন রোধে জরুরি কাজের অনিয়মের অভিযোগ করেন, এতে প্রকৌশলী যদি বদলি হয়ে যান, তাহলে এখানে কাজ হবে না।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রংপুর পানি উন্নয়ন (পাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি কী বলছি, আর কী বলি নাই, সেটার জন্য আলাদা তদন্ত হয়েছে। এটা নিয়ে আর কথা বলার কিছু নেই।’
নদী সংগঠক মহিউদ্দিন মহি অভিযোগ করেন, ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত কাজ করার জন্য বারবার সাব-ঠিকাদার ও শ্রমিক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান তা শোনেননি। পরে বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানকে (অবসরপ্রাপ্ত) জানানো হয়। এ কথা শুনে নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান সাব-ঠিকাদার আবু সাইদকে দিয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়ান।
এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদার আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি কেন তাঁকে (মহির) হুমকি দিতে যাব। এসব অভিযোগ মিথ্যা।’
রহিজ উদ্দিন বলেন, ২৯ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাত্র একজন সাব-ঠিকাদার দিয়ে কাজগুলো করা হয়েছে। বস্তার মতো বস্তা পড়ে আছে মানুষের বাড়িতে, নদীর মতো নদী ভাঙছে। কিছু বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন।
অভিযোগের বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসানের ভাষ্য, এমন কিছু ঘটেনি। কাজ চলমান। তাদের ধারণা ভুল। নদী সংগঠক মহিউদ্দিন মহিরকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য না, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এগুলো আমার জানা নেই।’