আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলা সদর উপজেলার সাতভিটা নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী পাঠাগার—‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’। আর এর পেছনের স্বপ্নদ্রষ্টা কেউ প্রভাবশালী কিংবা ধনী ব্যক্তি নন, তিনি একজন সাধারণ দিনমজুর—জয়নাল আবেদীন।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নিকটবর্তী এই গ্রামেরই মাটিতে। পড়াশোনা করতে পারেননি ক্লাস ফাইভের বেশি, সংসারের দায়ে ছোট বয়সেই গাজীপুরে চলে যান শ্রমজীবী জীবিকা গড়তে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ইটভাটায়—দিনে ১০-১২ ঘণ্টা।
২০১১ সালে কাজ শেষে হঠাৎ রাস্তার পাশে একটি পুরোনো বইয়ের দোকানে চোখ পড়ে তাঁর। সেখান থেকেই শুরু হয় বইয়ের প্রেমে পড়া। নিজের কষ্টের টাকায় বই কিনতেন, পড়তেন, আবার গ্রামের মানুষদের সেগুলো দিয়ে পড়তে উৎসাহ দিতেন। একসময় মাথায় আসে এক স্বপ্ন—নিজ গ্রামে একটি পাঠাগার গড়বেন।
প্রথমে গড়ে তোলেন ‘সাতভিটা পাবলিক লাইব্রেরি’। কিন্তু ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। হতাশ হলেও থেমে যাননি জয়নাল। পুরোনো বই সংগ্রহ করতে থাকেন গাজীপুরের নানা প্রতিষ্ঠান থেকে।
২০১৫ সালে নিজের সঞ্চিত অর্থে জমি কিনে পাঠাগারের জন্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। অনেকেই তাকে পাগল বলেছে, কিন্তু তিনি বলেন, “বই আমাকে বদলে দিয়েছে। আমি চাই, আমার গ্রামও বদলাক।”
অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ‘সাতভিটা গ্রন্থনীড়’। পাঠাগারে এখন রয়েছে প্রায় ৩,৫০০ বই। এখন এটি শুধু পাঠাগার নয়, পুরো এলাকার একটি আলোর বাতিঘর।
জয়নাল আবেদীনের কণ্ঠে আজও ঝরে আত্মবিশ্বাস ও নিরলস প্রচেষ্টার গল্প: যারা আমায় তাচ্ছিল্য করেছে, আজ তারাও গর্ব করে বলে—এই পাঠাগার আমাদের গ্রামের।