আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
রোববার (১৯ অক্টোবর) সময় দুপুর ১২টা। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ঘুরছিলেন মাঝ বয়সী একজন কৃষক। উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদী পাড়ি দিয়ে সাহেবের আলগা নামের চর থেকে এসেছেন তিনি। উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে খুঁজছিলেন তিনি। কেন এসেছেন জানতে চাইলে বাবর মোল্লা (৫০) নামের ওই কৃষক বলেন, ‘হামরা চরের মানুষ, পাট আবাদ করি।
চরের মধ্যে ম্যালা মানুষ পাট আবাদ করি। হুনছি পাট চাষিগোরে তিনি টেন্নিং (প্রশিক্ষণ) দেন। পাট চাষের জন্নি ইলিপ (প্রণোদনা) দেন। কিন্তু তিন দিন ঘুরি আজক্যাও অফিস বন্ধ পাইলাম।’
গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে এমন চিত্রই মেলে উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের অধীনে উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাসের অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে অফিসটি। কাগজে-কলমে একজন কর্মকর্তা ও একজন পিয়ন থাকলেও নানা সমস্যা নিয়ে অফিসে এসে কৃষকরা তাদের পান না।
গত ৬ অক্টোবর চরবজরা গ্রামের মোঃ মশিউর রহমান উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসেন। তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে খুঁজে আজ অফিস পেলাম । শুনলাম অফিসটি নাকি খোলে না।
গ্রামীণ ব্যাংক উলিপুর শাখার পাশের কক্ষেই উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এই শাখায় দুই বছর ধরে কর্মরত। কিন্তু কোনোদিন উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে দেখেননি। মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কর্মকর্তাকে দেখিনি, চিনিও না। তবে একটা পিয়নকে মাঝে মধ্যে দেখি।’
কার্যালয়ের পাশেই চায়ের দোকান করেন মোঃ আব্দুস ছালাম। তিনি বলেন, শুনেছি এখানে পাট কর্মকর্তার অফিস। ওই অফিসের পিয়ন মাঝে মধ্যে চা খেতে আসেন।
কয়েক দিনের চেষ্টার পর স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পিয়ন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। অফিস কেন বন্ধ থাকে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্যার আসে না। অফিস খুলি কি করব। স্যার যেদিন আসেন, আমি সেদিন আসি।’
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি জানি না উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় কোথায়। প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা দেবেন বলে মাঝে মধ্যে ওই কর্মকর্তা পাট চাষিদের নামের তালিকা নিতে আসেন। আর কিছু জানি না।’
উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প শেষের দিকে, তেমন কাজকর্ম নাই, তাই মাঝে মধ্যে যাই। কিন্তু পিয়নের তো অফিস খোলা রাখার কথা। তিনি জানান, তিন মাস পর পর ৫০ জন করে কৃষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও প্রণোদনা দেওয়া হয়। তখন অফিস নিয়মিত খোলা থাকে।