আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দশটি ঘর ভেঙে পুনরায় দখলের পাঁয়তারা করছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। তবে অজ্ঞাত কারণে উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
প্রায় ২৯ শতক জমির উপর নির্মিত ঘরগুলোর ভিতরের জানালা, দরজা, দেয়াল ও বাথরুমের প্যানসহ সবকিছু ভেঙে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী আনসার আলীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ঘরগুলোর চারপাশের উঠানে ধান চাষ করেছেন তিনি। সম্প্রতি একটি ঘরের বারান্দার তিনটি পিলার ভেঙে ফেলা হয়, যা স্থানীয়দের তোপের মুখে পুনরায় দাঁড় করানো হয়। তবে বারান্দাটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং বাতাসে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের সুইচগেট বাজার এলাকার গণকপাড়ায় খাস জমির উপর দশটি পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসন ঘরগুলো নির্মাণ করে নির্ধারিত পরিবারগুলোর হাতে হস্তান্তর করে। তবে ঘরগুলোর যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। চারপাশে ফসলি জমি ও কয়েকটি বাড়ি থাকলেও জনসাধারণের চলাচলের জন্য পথ নেই। চাঁদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি ৫ শতক জমি দান করলেও উপজেলা প্রশাসন সেখানে রাস্তা নির্মাণ করেননি।
সরেজমিনে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি আনসার আলী নামে এক ব্যক্তি তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পের ঘর নির্মাণের আগে আনসার আলী দীর্ঘদিন ধরে খাস খতিয়ানের ওই জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন। ঘর হস্তান্তরের পর যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় আশ্রয়িত পরিবারগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। অভিযোগ আছে, ঘরগুলো হস্তান্তরের কিছুদিন পর আনসার আলী প্রায় আটটি ঘরের পরিবারকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেছেন।
তিস্তা নদী হারিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় না থাকায় সুফিয়া খাতুন ও লিপি বেগম নামের দু’টি পরিবার মাঝে মাঝে ঘরে বসবাস করছেন। ১৪ মাস আগে স্বামী মারা যাওয়া সুফিয়া খাতুন বলেন, “স্বামী বেঁচে থাকতে অনেক কষ্ট সহ্য করতাম। এখন আর সেখানে থাকা যায় না। আনসার আলী ও তার লোকজন ঘরে তালা ভেঙে সবকিছু তছনছ করে। তাই ৫/৬ মাস ধরে বাবার বাড়িতে থাকি। দেশের পরিস্থিতির কারণে ওই দুই পরিবারকেও ঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।”
অভিযুক্ত আনসার আলী ও তার বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গি ভোগদখল করছিলাম। হঠাৎ সেখানে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করা হয়। ১০ বছর আগে জমি সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেছিলাম। ঘরে থাকা পরিবারগুলোকে বিতাড়িত করার অভিযোগ সত্য নয়। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় তারা সেখানে থাকে না।”
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা জানান, “বিষয়টি আমার জানা নেই। দ্রুত তহশিলদারের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।