ইবি প্রতিনিধি:
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে চার হাজার কোটি টাকার ‘হিট প্রজেক্টে’ অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একদল শিক্ষক। এতে প্রকৃত গবেষকরা অবমূল্যায়িত হয়েছেন বলে দাবি তাদের। প্রজেক্টটির পুরো নাম হাইয়ার এডুকেশন একসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন-হিট। প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রোববার দুপুরে ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। এসময় তারা হিট প্রজেক্টে প্রজেক্ট নির্বাচন নিয়ে ১২টি অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমান, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান ও সহযোগী অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলাম এবং দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিন্নাতুল করিম।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, প্রজেক্ট নির্বাচনে মেধা ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ লো প্রোফাইলধারী (টোটাল সাইটেশন ১০০ এর কম) গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ সাইটেশনের কম আছে এমন ৪০ শতাংশ গবেষকদের প্রজেক্ট নির্বাচন করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শিক্ষকদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো— সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচিত প্রজেক্টগুলো বাতিল করতে হবে। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান ও প্রকল্প পরামর্শক অধ্যাপক মোজাহার আলীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং নতুন করে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রজেক্ট নির্বাচন করতে হবে। নাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তারা।
এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ব্লাইন্ড রিভিউর পর উপস্থাপনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সবই ট্রান্সপারেন্ট। কেউ যদি কোনো তথ্য কেউ জানতে চায়, আমরা দিবো সমস্যা নেই। হিট প্রজেক্টের ম্যানুয়ালের নিয়মানুযায়ী সিলেক্টেড করা হয়েছে। ম্যানুয়ালের বাইরে কোনো কিছু হয়নি। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদেরকে বেশিরভাগ প্রজেক্ট দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ইউজিসির বাস্তবায়নাধীন ‘হিট প্রজেক্টে’ বাংলাদেশ সরকারের অর্থের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংক বহন করবে।