আবির হোসেন, ইবি :
দুই বছর আগে ভুয়া বিলের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উন্নয়ন প্রকল্পের (৩য় পর্যায়) বিলে সোয়া ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। পরে এ ঘটনার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ সাবেক উপাচার্য শাস্তি নির্ধারণে তিন সদস্যের কমিটি করলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সেই কমিটির কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে পড়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিরা বহাল তবিয়তে আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জড়িতদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে বারবার উপাচার্যকে জানালেও এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। তবে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বর্তমান উপাচার্য। এদিকে সোমবার শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে ক্যাম্পাসে এসে সরেজমিনে পর্যালোচনা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইবির ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজের সোয়া ৬ কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন দফতরে একটি বেনামি চিঠি আসে। সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক নওয়াব আলী, প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, নির্বাহী প্রকৌশলী বাদশা মামুনুর রশীদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান লালন, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় সাহা টনি ও আরিফের নাম ছিল। এ অভিযোগ তদন্তে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও তিন মাস পর গেল বছর ৯ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। এছাড়া ওই প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মেরও সত্যতা পাওয়া যায়। পরে গতবছর ১৯ মে ২৬৩ তম সিন্ডিকেট সভায় এই প্রতিবেদন খোলা হয়। কিন্তু ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়ি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন রুলস’ এর আলোকে অভিযুক্তদের বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করা ছিলো না। ফলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তৎকালীন সিন্ডিকেট। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তির ধারা নির্ণয় ও নির্দিষ্ট করার জন্য ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নির্ধারনে তিন সদস্যের কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। সিন্ডিকেটের ২৬৩ তম সভার ৫ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুবকে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনিচুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অপর সদস্য ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম। তবে কমিটি গঠনের পরপরই কোটা আন্দোলন শুরু হওয়া এবং পরবর্তীতে পটপরিবর্তনের কারণে এই কাজের অগ্রগতি হয়নি বলে জানান তারা। এদিকে একই বিষয়ে দুদক তদন্তে নেমে অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযুক্তদের সাক্ষাতকার নিলেও পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে শেষ হয়নি তদন্তকাজ। এদিকে ওই শাস্তি নির্ধারণ কমিটির মেয়াদ প্রায় দেড় বছর পেরোলেও কোনো ধরনের অগ্রগতি না হওয়ায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তবে সোমবার থেকে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ উত্তোলনের বিষয়গুলো নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে সরেজমিনে পর্যালোচনা শুরু করেছে দুদক কর্মকর্তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক বুলবুল আহমেদ রিয়াদ বলেন, আগে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়নি। বর্তমানে আমরা শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, মেগা প্রকল্পে অনিয়ম ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে সরেজমিনে পর্যালোচনা করছি। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। এক-দেড়মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।