আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব চাল নিয়ে চালবাজি, খাদ্যবান্ধব নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ডিলারদের যোগসাজসে খাওয়ার অনুপযোগী ও নিম্নমানের চাল বিতরণের অভিযোগ উঠে।
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার হালদার অভিযান চালিয়ে ময়নাল নামের এক ব্যবসায়ীর চালের গুডাউন ঘর সিলগালা করেন। এর আগে খাদ্যগুদাম ও কয়েকজন ডিলারের ঘর পরিদর্শন করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ৪১ জন ডিলার নিয়োগসহ প্রায় ১২ হাজার উপকারভোগীকে চাল কার্ড দেওয়া হয়েছে। বছরে ৬ বার খাদ্যবান্ধব চাল বিতরনের কথা রয়েছে। প্রতি মাসে প্রতিটি কার্ডের বিপরিতে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। সপ্তাহের সোমবার মঙ্গলবার ও বুধবার তিনদিন দেয়ার কথা রয়েছে। তারা প্রতি মাসে খাদ্যগুদাম থেকে চাল তুলে নির্ধারিত কেন্দ্রে চাউল বিতরণ করবেন।
কিন্তু উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা যে সমস্ত চাউল সরবরাহ করেন তাহা ৫০ কেজির পুরাতন বস্তা দিলেও বাস্তবে ওজনে কম, খাবার অনুপোগি ও নিম্নমানের চাল বলে ডিলাররা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। তার আগে ডিলারদের কাছে আসা কার্ডধারীরা অভিযোগ করেন ওজনে কম, খাবার অনুপযোগী ও নিম্নমানের চাল বলে অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এই অভিযান।
দাঁতভাঙ্গা বাজারে ডিলার আল আমিনের নিকট চাল নিতে আসা কার্ডধারী ইউনুছ, বকুল মিয়া, ফারুক হোসেন, ইদ্রিস আলী, আব্দুল আউয়াল, হাসান অভিযোগ করে বলেন, ৩০ কেজির স্থলে ২৮ থেকে ২৯ কেজি চাউল দেওয়া হয়। এছাড়া খাবার অনুপযোগী, দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নামনের চাল দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিতে অস্বীকার করলে ডিলাররা আমাদের প্রতি খারাপ আচরণ করেন।
এবিষয়ে ডিলারদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে খাদ্যগুদাম থেকে চাল দেয়া হয়েছে তা নিম্ন মানের। তবে সদরের আশেপাশের খাদ্য কর্মকর্তা তার পছন্দমত ডিলারদেরকে ভাল চাল দিলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডিলারদের খাবার অনুযোগী দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের চাল দিয়েছেন।
এবিষয়ে ডিলারদের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করলে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ তাদের ডিলারশীপ বাতিলের হুমকিও দেন।
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রৌমারীর মানুষ খুব সহজ-সরল,এ সুয়োগে খাদ্য কর্মকর্তা ও ডিলারদের যোগসাজসে নিম্নমানের চাল বিতরণ করছেন। আমি এর তীব্রপ্রতিবাদ জানাচ্ছি।
খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল্লাহ বলেন, আমার এখান থেকে ডিলারদের নামের যে সব চাউল সরবরাহ করা হয়েছে তা ভাল। খারাপ ও নিম্নমানের চাল আমি দেইনি। তবে ডিলাররা ভালচাল নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে খারাপ চাল কমদামে কিনে কার্ডধারীদের বিতরণ করতে পারেন।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উজ্জল কুমার হালদার বলেন, নিম্নমানের চাল বিতরণসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে খাদ্যগুদাম পরিদর্শন ও অভিযান চালান। পরে কয়েকটি ডিলারের কেন্দ্রঘর পরিদশর্ন ও অভিযান চালিয়ে নিম্নমানের চাউলের সত্যতা পান।
তবে ডিলাররা জানান, খাদ্যকর্মকর্তা আমাদেরকে এই চাল দিয়েছেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রৌমারী বাজারের বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী ময়নাল হকের চালের গুডাউন ঘরে অভিযান চালিয়ে সরকারি বস্তাসহ নিম্নমানের চালের সত্যতা পান। এক পর্যায়ে তিনি দুটি গুডাউন ঘর সিলগালা করেন।