মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগরীর আলোচিত যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ও এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হলে ঠিকাদারীতে ছিল তার এক আধিপত্য। ৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রুখতে অস্ত্র হাতে মহড়াও দিতে দেখা গেছে তাকে। সেই রণি ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া মিলু।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান সব কাজ চলছে এখনও নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনির নামে। এটি তদারকির দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া মিলু। অভিযোগ আছে, ৫ আগস্টের পর ইয়াহিয়া মিলুর আশ্রয়ে আছে রণি। তার কাছ থেকে কর্তৃত্বের ক্ষমতা নিয়ে কাজগুলো করছেন মিলু। যদিও মিলু বলেন, ‘রণি কোথায় আছে আমি জানি না। আমরা আগে থেকেই ব্যবসায়ীক পার্টনার। রনি পলাতক থাকায় সেজন্য কাজগুলো এখন আমি দেখাশোনা করছি।’ সমাজের প্রশ্ন যদি সে নাই জানে রনি কোথায় তাহলে রনির স্বাক্ষর করা ‘ক্ষমতাপত্র’ কাগজ কিভাবে পেল মিলু। এছাড়াও সিটি করপোরেশন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নথিতে যুবলীগ নেতা রণির মালিকানাধীন রিথিন এন্টার প্রাইজের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনার কোনো তথ্য নেই।
রাসিক ও আরডিএ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে যুবলীগ নেতা রনি শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পার্ক, প্রান্তিক নামে আবাসিক প্রকল্পের ভরাট কাজ, টিবি পুকুর সংস্কার এবং রাস্তা নির্মাণের কাজ হাতিয়ে নেন। ৫ আগস্টেও পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর চলমান এসব কাজের আংশিক বিল তুলে নেন ইয়াহিয়া মিলু। মিলু নিজেকে বিএনপি নেতা হিসাবে পরিচয় দেন। বিলের টাকা তুলতে তিনি রনির স্বাক্ষর করা ‘ক্ষমতাপত্র’ জমা দিয়েছেন।
নগরীর ভদ্রা এলাকায় প্রায় ১৩ একর জায়গার ওপর ১৯৮২ সালে নির্মাণ করা পার্কটি সংস্কার করতে ব্যয় করা হচ্ছে ৪৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। পার্কটির উন্নয়নে ২০২০ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সে বছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। কাজের প্রস্তুতি নিতেই ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে প্রকল্পটির মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়। তৌরিদ আল মাসুদ রনির রিথিন এন্টারপ্রাইজ ২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ড্রেন, জলাধারের জন্য রিটেইনিং ওয়াল, সীমানা প্রাচীর, পুকুর সংস্কার, পুকুর থেকে পারিজাত লেক পর্যন্ত খাল খনন, জলাধারের ওপর তিনটি নান্দনিক ব্রিজ, রাস্তাঘাট, অ্যাম্পি থিয়েটার, রিফ্রেশ জোনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে। এ ছাড়া ১৩ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করছে পার্কের সার্ভিস স্টেশন, দুটি টয়লেট ব্লক, পার্কের বাইরে রেস্ট হাউস, পার্কিং স্টেশন, ট্রয় ট্রেন স্টেশন ও প্লেয়িং জোন। এরই মধ্যে আরডিএ থেকে তিনটি চেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা তুলেছেন মিলু। প্রান্তিক আবাসিক প্রকল্পের ভরাট কাজ শেষ করে তার বিপরীতে পাওয়া বিল মিলুর মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন রণি।
আরডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘মিলুর কাছে রণির দেওয়া প্রকৃত ডকুমেন্টস থাকায় আমরা নিয়ম মেনে বিল পরিশোধ করেছি। এখন মিলুর সঙ্গে রণির কোথায় দেখা হয়েছে বা আগে থেকে এমন কোনো চুক্তি তাদের মধ্যে ছিল কি না আমি জানি না।’
নগরীর লক্ষ্মীপুর বক্ষব্যাধি ও শিশু হাসপাতালের সামনের বিশালায়তনের জোড়া পুকুরের মালিক স্বাস্থ্য বিভাগ। ইজারা দিয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় হতো। তবে ২০২২ সালের ২৩ মার্চ রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নূর ইসলাম ইজারা না দেওয়ার জন্য বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালকে চিঠি দেন। এরপর পুকুর দখলে নিয়ে কাজ শুরু করে রাসিক। প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজটি পায় যুবলীগ নেতা তৌরিদ আল মাসুদ রনির মালিকানাধীন রিথিন এন্টার প্রাইজ। এই কাজের সম্পুর্ন তথ্য নিতে সিটি কর্পোরেশন গেলে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদুর রহমান নয় ছয় বুঝাতে শুরু করে। পরে তথ্যের জন্য আবেদন করার পর ও হয়রানীর শিকার হতে হয়। ১৯ দিন পর অবশেষে কিছুটা তথ্য দেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। এরপর সেই কাজের দায়িত্ব নেন বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া মিলু। তবে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সেটি বন্ধ করেন দেন এলাকাবাসী। পরেও আবারও কাজ শুরু হয়েছে। সিটি করপোরশেনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল আল মঈন খান বলেন, ‘কাজটি সম্পন্ন করা আমাদের লক্ষ্য। রণি প্রকৃত ঠিকাদার হলেও মিলু পাওয়ার অব এটার্নি এনেছে। এখন সে কাজটি করছে।’ নিম্নমানের কাজ হলে সেটি দেখা হবে বলে তিনি জানান।
তবে সিটি কর্পোরেশনের অনির্বর যোগ্য তথ্য দেই কিছু কর্মকর্তা , চাকুরী হারানোর ভয় অথবা তার উপড়ে হামলার ভয়ে নাম নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানায় , ৫ আগস্ট এর পর বিএনপির অনেক জনকে বাইরে দাঁড় করিয়ে মিলু ভাই নির্বাহী প্রকৌশলীদের কে ভয় ভীতি দেখিয়ে ১৫% কমিশন চুক্তিতে কাজ নিয়েছ মিলু। আইন পরিস্থিতি দূর্বল থাকার জন্য অফিসের সবাই ৫ তারিখের পর থেকে ভয়ে রয়েছে।