ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলায় সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যকার মারামারির ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিন সাংবাদিককে মারধর করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোববার ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা হলেন— জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরিফ বিল্লাহ, দৈনিক আজকালের খবরের রবিউল আলম এবং বার্তা২৪ এর নূর ই আলম। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন— অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, সাব্বির, আফসানা পারভিন তিনা, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, রিয়াজ মোর্শেদ, সৌরভ সোহাগ ও পান্না। একই বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয়সহ অন্তত ২০-২৫ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলায় মারামারিতে জড়ান বিভাগটির সিনিয়র ও জুনিয়ররা। এসময় মারামারির ঘটনা ভিডিও করতে গেলে আরিফ বিল্লাহ’র মোবাইল কেড়ে নেন আফসানা পারভিন তিনা। তখন তার উস্কানিতে বিভাগটির অন্য শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে তেড়ে এসে ওই সাংবাদিককে মারধর শুরু করেন। এ সময় আশেপাশের কয়েকজন ঠেকাতে গেলেও দফায় দফায় মারধর করা হয়। ওই সময় আরেক সাংবাদিক নূর ই আলম তা ভিডিও করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। পরবর্তীতে একইভাবে আরেক সাংবাদিক রবিউল আলমের ওপর হামলা করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ভিডিও করার সময় এক মেয়ে এসে আমার মোবাইল কেড়ে নেন। আমি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ৮-১০ জন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরেন এবং চড়, থাপ্পড়, ঘুষি মারতে থাকে। প্রক্টর অফিসে যাওয়ার পর ২২ ঘন্টা পর আমার ফোনটি ফেরত দিলেও ফোনটি রিসেট করে গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য ডিলিট করা হয়েছে। তাই প্রক্টর অফিস থেকে ফোনটি ফেরত নেইনি। এ ঘটনার তদন্তপূর্বক বিচার এবং আমার ফোনের সমস্ত তথ্য ফেরতপূর্বক ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি। অন্য ভুক্তভোগী রবিউল আলম বলেন, তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এসময় নাহিদ হাসান আমার তলপেটে লাথি মারে।
অভিযুক্ত নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরছে তখন আমি কি করব?
অন্য অভিযুক্ত আফসানা পারভিন তিনা ও রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, বিভাগের শিক্ষকরা বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেওয়ায় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
এবিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে ‘ভুয়া নাটক’:
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করছেন, প্রক্টরের সামনে তাদের বান্ধবী আফসানা পারভিন তিনাকে সাংবাদিকরা মারধর করেছে। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাও নিয়েছেন ওই ছাত্রী। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি যত সময় সেখানে ছিলাম কোনো মেয়ের উপর হামলা হতে দেখিনি। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী বলেন, পুরো ঘটনার সময়ে আমি সেখানে থাকলেও ওই মেয়েকে মারধর করতে দেখিনি। ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ওই ছাত্রী নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে তাকে প্রক্টর স্যারের গাড়িতে মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এছাড়া অভিযুক্ত ওই ছাত্রীকে চিকিৎসা প্রদানকারী ডা. সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রীর গায়ে কোন আঘাত লাগার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক অ্যাটাকের কারণে এমন হতে পারে। এছাড়াও প্রক্টরের সামনে ওই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু জানিনা।
ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন:
সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাফত ছাত্র মজলিস ও জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া। বিবৃতিতে তারা জড়িতদের দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া রোববার দুপুরে প্রশাসন ভবনের সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন করেছেন কমিউনিশেন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা।