সৈয়দ মিয়া (চট্টগ্রাম প্রতিনিধি) :
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত এই দিনটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ সরকারি ছুটি, র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
ইতিহাসের পেছনে :
১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে হাজার হাজার শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন। হে মার্কেট চত্বরে তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালালে অনেক শ্রমিক নিহত হন। সেই আত্মত্যাগ বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের মধ্যে বয়ে আনে অধিকার আদায়ের
নবচেতনা। ১৮৮৯ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশে মে দিবসের প্রচলন ও তাৎপর্য :
বাংলাদেশে মে দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৬০-এর দশকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন শুরু হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক নিরাপত্তার দাবি নতুন করে উঠে আসে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ :
যুগে বদলেছে। শুধু কারখানা নয়, এখন গার্মেন্টস, নির্মাণ, রেমিট্যান্সনির্ভর প্রবাসী শ্রমিক, এমনকি অনলাইনভিত্তিক গিগ কর্মীরাও শ্রমশক্তির বড় অংশ। তবে এখনো অনেক শ্রমিক বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা সুবিধা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ থেকে।
বিশেষজ্ঞদের মত :
শ্রম বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু মে দিবস পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং শ্রম আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দিকেই জোর দেওয়া জরুরি।
মে দিবস কেবল অতীতের গৌরবগাঁথা নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের শ্রমিকবান্ধব সমাজ গঠনের আহবান। সমাজের অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি এই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই হোক এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।