স্টাফ রিপোর্টার:
সরকারি কর্মচারীরা আগামী ১ জুলাই থেকে মূল বেতনের ১০ শতাংশ টাকা বেশি পাবেন। সাধারণভাবে সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) রয়েছে। এর সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ হবে। সব মিলে তাদের বেতন বাড়ছে ১০ শতাংশ।
গত রবিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ নতুন করে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি বিষয়টি গ্রহণ করবেন।’
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর অনুমোদনের জন্য যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জুলাইয়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করার আশা করছে অর্থ বিভাগ।
জানা গেছে, বাড়তি ৫ শতাংশ বেতনের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি ব্যয় হবে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। বাড়তি প্রণোদনা এককালীন নয়, বরং প্রতি মাসের বেতনের সঙ্গে যোগ হবে। অর্থ বিভাগের চেষ্টা থাকবে সরকারি কর্মচারীরা মাস শেষে যখন জুলাই মাসের বেতন তুলবেন, তখন যেন বাড়তি পাওনাটা তুলতে পারেন। জুলাইয়ের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ না হলে তা আগস্টে গড়াবে। তবে বাড়তি বেতন জুলাই থেকেই কার্যকর করা হবে।
বাজেট ঘোষণার আগে গত মে মাসের মাঝামাঝিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে। বার্ষিক বৃদ্ধি ৫ শতাংশ এবং নতুন প্রণোদনা ৫ শতাংশ মিলিয়ে অবশ্য মূল্যস্ফীতি সমন্বয় হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের বেতন কমিশনে বলা ছিল, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হবে সরকারি কর্মচারীদের। সে অনুযায়ী তা হয়েও আসছে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ শতাংশ ছিল বলেই ইনক্রিমেন্ট একই হারে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন মূল্যস্ফীতি বেশি বলেই ইনক্রিমেন্টের হার বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ, যদিও গত মে মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোর সুপারিশ সরকার না মানার কারণেই বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সম্প্রতি নতুন করে সামনে এসেছে। সেই বেতন কাঠামোতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হবে। তবে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের বেশি হলে বেতন বৃদ্ধির হারও সে অনুযায়ী বাড়বে, তবে বাস্তবে তা মানা হচ্ছিল না।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৭৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। বাজেট সংক্ষিপ্ত সার ২০২৩-২৪ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। বাড়তি প্রণোদনার জন্য অর্থ নেওয়া হবে থোক বরাদ্দ থেকে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানালেও সরকারি কর্মচারীরা প্রণোদনায় সন্তুষ্ট নন। তারা বলছেন, ৫ শতাংশ প্রণোদনা বর্তমান বাজারদর ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্থায়ীভাবে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি তাদের। দাবি মানা না হলে ঈদের পর আবার আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব আবু নাসির খান আমাদের সময়কে বলেন, ৫ শতাংশ প্রণোদনায় বেতনবৈষম্য আরও বাড়বে। অবিলম্বে তিনি নবম জাতীয় পে-কমিশন গঠনের দাবি জানান। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা প্রণোদনা চাইনি, চেয়েছি বেতন বৃদ্ধি বা মহার্ঘ্য ভাতা। মুজিববর্ষে দিলে সেটা হতো প্রণোদনা। এখন বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বেতন-ভাতা বাড়ানো দরকার। প্রণোদনায় কাজ হবে না। ঈদের ছুটির পর সব সংগঠনের সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।