স্টাফ রিপোর্টার:
এবারও ট্রেনে কোরবানির পশু ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে সরকার। গত ২৪ জুন থেকে আজ ২৬ জুন পর্যন্ত রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে আনা হচ্ছে। ঈদের তিন দিন আগে থেকে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে গত বছর ‘ক্যাটল স্পেশাল সার্ভিস’ করে গবাদি পশু পরিবহন করেছে। এবার ‘ক্যাটল স্পেশাল সার্ভিস’ না থাকায় ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে’ গবাদি পশু আনা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম জোন ঈদুল আজহা সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলা থেকে কম খরচে পশু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আলাদাভাবে শুধু গবাদিপশু পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা তাদের নেই। তাই চলতি বছরের গত ২৪ থেকে আজ সোমবার (২৬ জুন) পর্যন্ত ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের পৃথক ওয়াগনে গবাদি পশু পরিবহন করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল জোনের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, টানা তৃতীয় বারের মতো কৃষক ও ব্যবসায়ীদের চাহিদার ভিত্তিতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশু পরিবহন করা হচ্ছে। ট্রেনটি বিকাল ৪টায় রোহনপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীসহ ছয়টি স্টেশনে গরু বোঝাই করে গভীর রাতে ঢাকায় পৌঁছাবে। ২৪ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত এই ট্রেন সার্ভিস চালু থাকবে এবং চাহিদা সাপেক্ষে এক দিন বাড়ানো হতে পারে বলে অসীম কুমার তালুকদার জানান।
তিনি জানান, একটি ব্রডগেজ ওয়াগনে ২০টি গবাদিপশু ১১ হাজার ৮৩০ টাকা ব্যয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে। গবাদি পশু (২০টি গবাদি পশুর পাল) বোঝাইকৃত ওয়াগনের জন্য প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৩৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে গরুর পাল বোঝাই ওয়াগনের জন্য খরচ হবে ৬ হাজার ৮৬০ টাকা। এছাড়া রাজশাহী থেকে ঢাকায় ২০টি গবাদি পশু পরিবহনের জন্য ১ হাজার ৩৭৬ টাকা সারচার্জ, ২ হাজার ৫৭৪ টাকা টার্মিনাল ভাড়া এবং অন্যান্য খরচসহ সর্বমোট ১১ হাজার ৮৩০ টাকা নেওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, অংশীজনদের পরামর্শের ভিত্তিতে প্রান্তিক গরুর খামারমালিকদের সহজে ও কম খরচে কোরবানির পশু ঢাকায় নিয়ে যেতে উত্সাহিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে বিশেষ ট্রেনটি কাকনহাট, রাজশাহী, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমসহ ছয়টি রেলস্টেশনে থামবে। রেলওয়ের এই ওয়াগনগুলোতে পর্যাপ্ত জানালা রয়েছে, যার ভেতর দিয়ে বাতাস যাওয়া-আসা করতে পারে। তাছাড়া দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরমে যাতে পরিবহনকৃত পশুগুলো অসুস্থ না হয়ে পড়ে, সেজন্য রাতে এই ট্রেন চলবে। গবাদিপশু এবং গবাদি পশু ব্যবসায়ীরাও যাতে একই ওয়াগনে তাদের গন্তব্যে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ট্রেনে করে কোরবানির পশু পরিবহন করায় ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। পশু পালনকারীদের চাহিদার ভিত্তিতে দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকায় গবাদি পশু পরিবহনের সুবিধার্থেই এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, একটি ট্রেনে ২৫টি কোচ হলে ৪০০টি পর্যন্ত পশু পরিবহন করা যাবে। ব্যবসায়ীদের চাহিদার ভিত্তিতে এই বিশেষ ট্রেনের সংখ্যা কমবেশি হতে পারে। চাহিদা বেশি থাকলে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ থাকলে সেখান থেকেও স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে।
২০২০ সালের জুলাইয়ের প্রথম দিকে কোরবানি উপলক্ষ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ট্রেনে করে কোরবানির পশু পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া পায়নি রেলওয়ে। এর আগে ২০০৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ঘাট থেকে কোরবানির পশুবাহী সাতটি ট্রেন পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রাজধানী ও বিভাগীয় শহরসহ অনেক জেলায়ই ট্রেন চলাচল করে। এতে পশু পরিবহনে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি জানান, চলতি বছর কোরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকায় বৈধ বা অবৈধভাবে কোনো পশু দেশের বাইরে থেকে আসবে না। কোরবানির পশু পরিবহনে থাকবে স্পেশাল ট্রেন। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কোরবানি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া বিক্রেতাদের রাস্তায় নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান শ ম রেজাউল করিম।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে এখন ছোট-বড় প্রায় ৭ লাখ গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে কোরবানির উপযোগী পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পশুর হাটে থাকবে পশু ডাক্তারদের মোবাইল টিম।
তিনি মুঠোফোনে জানান, সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১১৫টি কোরবানির পশুর খামার আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯২ হাজার, খুলনায় ১ লাখ ৭ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ২২ হাজার, রাজশাহীতে ১ লাখ ২৭ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৪ হাজার, ময়মনসিংহে ৪০ হাজার, বরিশালে ২০ হাজার ও সিলেটে ১২ হাজারের বেশি পশুর খামার আছে।