স্টাফ রিপোর্টার:
বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা, স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণসহ ৭ দফা দাবিতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে চা শ্রমিকরা।
শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী বাগানের চা শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রোকনপুর বাজার এলাকায় অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
চা শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এই দুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক।
বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত শ্রমচুক্তি অনুযায়ী তাদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করছে না মালিকপক্ষ। এ নিয়ে গত ২৫ জুন চা শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর লিখিত ভাবে জানায় চা শ্রমিকরা। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় ৩ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত কর্মবিরতী পালন করে চা শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছেনা মলিকপক্ষ। এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা না করার ফলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকরা পিএফ অর্থ পাচ্ছে না।
অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা।
সংকট সমাধানে কয়েক দফা বৈঠক হলে তা সমাধানের আশ্বাস দেয় মালিকপক্ষ। শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের সমঝোতায় বৈঠকে বসে ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেড ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এসময় ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিকে মাইনুদ্দিন চৌধুরী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ, ভবিষ্যত তহবিলের টাকা ৩০ আগস্টের মধ্যে পিএফ কার্যালয়ে কিস্তি আকারে জমাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে নিয়ে চুক্তি সই হয়। এরপর ১২ জুলাই থেকে কাজে যোগদেন শ্রমিকরা। ১৮ জুলাই বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় মালিক পক্ষ। পুনরায় নতুন তারিখ হিসেবে ২০ জুলাই বকেয়া টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে ২০ জুলাইও বকেয়া পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। এছাড়া ১২ জুলাই হতে ২০ জুলাই পর্যন্ত চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করলেও ৮ দিনের দৈনিক মুজুরিও শ্রমিকদের দেয়নি মালিকপক্ষ। ফলে শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে আবার কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে করছে শ্রমিকরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী বাগানের চা শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রোকনপুর বাজার এলাকায় অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় মহাসড়কে প্রায় ২ ঘণ্টা তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহম্মেদ চা শ্রমিকদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।