আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধিতা উপেক্ষা করে সাগরে পরমাণু তেজস্ক্রিয় পানি অবমুক্ত করেছে জাপান। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রশান্ত মহাসাগরে এই পানি অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে জাপান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
২০১১ সালে আঘাত আনা সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায় ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্র। সেখানে তখন ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন পানি ছিল যা ৫০০টি অলিম্পিক আকৃতির পুল পূর্ণ করতে যথেষ্ট। পরমাণু কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে থাকে। দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
দুর্যোগের পর স্বাভাবিক ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে থাকলেও এই পানি সংরক্ষণ করে জাপান কর্তৃপক্ষ। তেজস্ক্রিয়তার কারণে এটি আলাদা করে কন্টেইনারে ভরে রাখা হয়। দুই বছর আগে জাপান সিদ্ধান্ত নেয় তারা তেজস্ক্রিয়তার শিকার এই পানি অবমুক্ত করবে। এই সিদ্ধান্তে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একাধিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এরপর থেকেই এই পানি পরিশোধন করতে থাকে জাপান। চলতি বছর জুলাইয়ে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা পানি অবমুক্ত করার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেয়। তারা জানায়, পরিবেশ ও এখানকার মানুষের ওপর এর প্রভাব খুব সামান্য।
তবে এখানকার স্থানীয়রা, বিশেষ করে যার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। তারা মনে করছেন, তাদের জীবিকার ওপর এই তেজস্ক্রিয় পানি প্রভাব ফেলবে।
একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোও এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন। ইতোমধ্যে জাপান থেকে সব ধরনের সামুদ্রিক খাবার আমদানি বন্ধ ঘোষণা করেছে চীন। বেইজিং সরকার জানায়, `তারা জাপানের খাবারে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।’
তবে সবকিছু উপেক্ষা করে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা ১ টার দিকে এই পানি সাগরে মুক্ত করতে শুরু করে জাপান। এখন পর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীনের অবস্থান নিয়ে জাপান বলছে, তারা অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন দাবি করছে। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছেন, স্থানীয় জনগণ ও অন্যান্য দেশের ওপর পরোক্ষা ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ দেখা জাপানের উচিত নয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, টেপকো কেন্দ্রের অপারেটররা পানি পরিশোধন করে ৬০টিরও বেশি তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলেছেন। তবে পানিকে পুরোপুরি তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুব বেশি পরিমান পান করা না হলে এই পানি বিপজ্জনক নয়, কারণে এখানে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা খুবই অল্প।