স্টাফ রিপোর্টার:
ভোর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ক্যারেট ভর্তি করে হাটে আম বিক্রি করতে আসেন বাগান মালিকরা। রাস্তার ওপর হাজার হাজার ভ্যানগাড়িতে করে আম্রপালি আম সাজিয়ে রেখেছেন। আর পাইকাররা দর দাম করে কিনে সেই আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন এই হাট থেকে। বলছি দেশের বৃহত্তম আম্রপালি আমের বাজার নওগাঁর সাপাহার আমের হাটের কথা। দৈনিক কোটি টাকার আম্রপালি আম কেনাবেচা হয়ে থাকে হাটটিতে।
এ বছর জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন করেছেন চাষিরা। যার মধ্যে আম্রপালি আম ১৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন চাষিরা। এই আমের সুমিষ্টঘ্রাণ ভোক্তাকে আম খাওয়ায় আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে। আর সাপাহারের আম্রপালি আম সুমিষ্টঘ্রাণের জন্য সারাদেশের মানুষের কাছে এর চাহিদাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
উত্তরের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জেলা নওগাঁ এক সময় গাঁজা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। জেনেভা কনভেনশনে গাঁজা মাদক হিসেবে নিষিদ্ধ করা হলে, চাষিরা ধান উৎপাদনে দেশের শীর্ষ অবস্থান অর্জন করে। বর্তমান সময়ে ধানের পাশাপাশি আম উৎপাদনে দেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে নওগাঁ। নওগাঁর আম্রপালি আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গেছে। আর জেলার মধ্যে আম্রপালি আম উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে সাপাহার উপজেলা।
এখানেই দেশের বৃহত্তম রুপালী আমের হাট। সকাল থেকে হাটটিতে ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত থাকে রাত পর্যন্ত। প্রতিদিন কেনা-বেচা হয় কোটি টাকার আম। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে ভিড় করেন রুপালী আম সংগ্রহে। তাদের মতে, সাপাহার আমের হাটের মতো এতো বড় আম্রপালি আমের হাট দেশের কোথাও নাই। ভালো জাত এবং রুপালি আমের সু-ঘ্রাণের জন্য দেশজুড়ে বিখ্যাত এই আমের হাটটি।
সাপাহার আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা জানান, সাপাহারের আম্রপালি আম দেশজুড়ে বিখ্যাত। সরকার যদি সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে ভোক্তা পর্যায়ে সারা বছর আম সরবরাহ করা সম্ভব হতো। এ ছাড়া যদি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে সারাদেশের সঙ্গে আম বাণিজ্যে অনেক সুবিধা হতো।
জেলা কৃষি-বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, আম্রপালি আম মূলত বারী-৩ জাতের আম। এই আম নওগাঁ জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে থাকে। উৎপাদনের পাশাপাশি দেশে বিদেশে ব্রান্ডিং করার ক্ষেত্রে এই জেলা এগিয়ে আছে। এ ছাড়াও অনেক বেকার যুবক মৌসুমি আম ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের বেকারত্ব দূর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, নওগাঁ জেলায় এ বছর প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু আম্রপালি আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পায় ২ লাখ ৩০ টন।