স্পোর্টস ডেস্ক:
জাতীয় দলের রুদ্ধদ্বার অনুশীলন নিয়ে গত কয়েক দিন আলোচনা কম হয়নি। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হঠাৎ এমন কী অনুশীলন করাচ্ছেন যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ করে নিতে হচ্ছে? বিশেষ করে মিডিয়াকে ধারেকাছে ভিড়তে না দেওয়াকে রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে।
রুদ্ধদ্বার অনুশীলনের পরিকল্পনায় জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিষয়টি গোপন রাখার যথেষ্ট প্রয়োজনীতা রয়েছে। হাথুরুসিংহে চান না ডামি প্রতিপক্ষকে নিয়ে করা কৌশল প্রকাশ পাক ফেসবুক ও ইউটিউবে অনুশীলনের ভিডিও প্রচারের মাধ্যমে।
ডামি প্রতিপক্ষ বলতে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানকে মাঠে রেখে ম্যাচ পরিস্থিতির অনুশীলন করা। খেলোয়াড় দেশি হলেও বোলিং, ফিল্ডিং এবং ব্যাটিংয়ে থাকে এশিয়া কাপের দলগুলো। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিমদের প্রতিপক্ষ বোলারদের মাথায় রেখে ব্যাটিং করাচ্ছেন কোচ।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের গ্রুপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচ আবার লঙ্কানদের বিপক্ষে। এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সম্প্রতি ভালোও করছে দেশটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গেম প্ল্যান কী হবে সেসব ম্যাচ পরিস্থিতিতে শেখানো হচ্ছে। লঙ্কান বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের বোলিং ও ফিল্ডিং বিশ্লেষণ করে গেমের কৌশল বর্ণনা করেন পারফরম্যান্স বিশ্লেষক কোচ শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরন। প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেকে গেম প্ল্যান করতে সাহায্য করেন অন্য কোচিং স্টাফ। সে অনুযায়ী ক্রিকেটাররা দুই ভাগে ভাগ হয়ে ম্যাচ খেলেন।
এশিয়া কাপের প্রতিপক্ষ অনুযায়ী কে কোন পজিশনে ব্যাট করবেন, সে অনুশীলনও করা হচ্ছে মিরপুরে। ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৭ আগস্ট চার দিনের ম্যাচ পরিস্থিতি অনুশীলন রাখা হয়েছে। রুদ্ধদ্বার এ অনুশীলনের শেষ পর্ব আজ। গ্রুপ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা হয়ে গেছে মেহেদী হাসান মিরাজদের। দ্বিতীয় রাউন্ডের কথা মাথায় রেখে ভারত, পাকিস্তানেরও মুখোমুখি করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তদের।
এটা যে একেবারে নতুন ধরনের অনুশীলন তা নয়। জাতীয় দলের আগের কোচরাও এভাবে অনুশীলন করেছেন অন্য কৌশলে। হাথুরুসিংহে সেটাকে বাস্তব প্রতিপক্ষের ডামি রেখেছেন।
এ কৌশল কিছুটা সামরিক প্রশিক্ষণের মতো। সৈনিকরা যেমন যুদ্ধের মহড়ায় লিপ্ত হন শত্রু মাথায় রেখে, এশিয়া কাপের আগে মুস্তাফিজুর রহমানদেরও মহড়া হচ্ছে অনুরূপ কৌশলে।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, এ কারণে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করা। মিডিয়ার মাধ্যমে এই কৌশল ছড়িয়ে পড়ুক তা চাননি কোচ।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, সহঅধিনায়ক লিটন কুমার দাস না থাকলেও ব্যাটিং অনুশীলনে সমস্যা হয়নি বলে জানায় টিম ম্যানেজমেন্টের একজন সদস্য। তারা দু’জন অটো চয়েস হওয়ায় এবং ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারিত থাকায় বাকি জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করছেন হাথুরুসিংহে। বিশেষ করে কোন ম্যাচে কাকে কোন পজিশনে খেলানো হবে, সে ছকে ব্যাটারদের অভ্যস্ত করে নিচ্ছেন। কারণ তারা যেন মূল ম্যাচে খেলতে নেমে জড়তা অনুভব না করেন। এক কথায়, ঢাকার অনুশীলন থেকে এশিয়া কাপের গেম প্ল্যান পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা।
এর পেছনে কারণও রয়েছে– এশিয়া কাপ থেকে বিশ্বকাপের সেরা দলটা বেছে নিতে হবে। ১৭ জনের স্কোয়াড থেকে বাদ দিতে হবে দু’জনকে। পাঁচজন পেস বোলার রেখে বাকি ১০ জনকে নির্বাচক করতে হবে ব্যাটার, অলরাউন্ডার ও স্পিনারদের মধ্য থেকে। এই কাজের জন্য এশিয়া কাপে কিছু জায়গা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। এ জন্য ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স পেতে আগে থেকে শিখিয়ে-পড়িয়ে নেওয়া।